বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি বিভাজনের রাজনীতি করেনা, ঐক্যের রাজনীতি করে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন।
তিনি বলেন, আমরা বিএনপি মনে করি যে, বাংলাদেশ আমার দেশ, আমরা মনে করি যে, এখানে যারা বাস করেন সব মানুষই বাংলাদেশি। এখানে ধর্ম আলাদা, একেক জনের একেকটা ধর্ম হতে পারে, চিন্তাভাবনা আলাদা হতে পারে। কিন্তু একটা জায়গায় এসে আমরা সবাই বাংলাদেশি। এই তত্ত্ব আমাদের দিয়েছেন তাঁর দর্শনের মাধ্যমে তিনি হচ্ছেন আমাদের স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, এই বাংলাদেশি দর্শনের মধ্য দিয়ে আমাদের দেশের সকল মানুষকে একত্রিত করতে সক্ষম হবো। আমরা বিভাজনের রাজনীতি করি না। আমরা সব সময়ে ঐক্যের রাজনীতি করি। বাংলাদেশকে যদি সমৃদ্ধ করতে হয়, বাংলাদেশকে যদি সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হয় তাহলে এখানে অবশ্যই একটা ইস্পাতকঠিন ঐক্য দরকার আছে সকল বাংলাদেশির মাঝে।
আজ বৃহস্পতিবার (০৩ মার্চ ২০২২), দুপুরে রাজধানীর বাসাবো বৌদ্ধবিহারে বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতা মহাসংঘনায়ক শুদ্ধানন্দ মহাথের’র অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে এসে আয়োজিত শ্রদ্ধার্পণ সভায় এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
এর আগে দুপুর ১২টায় বাসাবো ধর্মরাজিক বৌদ্ধবিহারে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব প্রথমে বিহারের মূল ভবনের দোতলায় গ্লাসের ভেতরে রক্ষিত শুদ্ধানন্দ মহাথের’র মরহেদে দলের পক্ষ থেকে পুস্পস্তবক অর্পন করেন এবং তার স্মৃতির প্রতি সন্মান জানাতে কিছুক্ষন নিরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে বিএনপি মহাসচিব যান মূল প্যান্ডেলে। সেখানে তিনি বক্তব্য রাখেন।
বক্তব্যের শুরুতেই বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মহাসংঘনায়ক শুদ্ধানন্দ মহাথের শান্তির জন্য, সৌহাদ্রের জন্য, মানুষে-মানুষে ভালোবাসা সৃষ্টির জন্য সারাজীবন অতিবাহিত করেছেন। শান্তির বাণী প্রচার করেছেন। তার অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আমরা এসেছি। বেগম খালেদা জিয়া ও আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করার জন্য এসেছি।’
মহান শুদ্ধানন্দ মহাথের’র মহাপ্রয়ানে, তিনি যেন পরলোকে শান্তিতে থাকেন এই প্রার্থনা আমরা করি। আমরা প্রার্থনা করব যে, সৃষ্টিকর্তা তিনি যেন আমাদের এই পৃথিবীকে শান্তিময় করে দেন, আমরা প্রার্থনা করব এই বাংলাদেশকে তিনি যেন শান্তিময় করে দেন। আমরা যেন, বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র, একটি পরস্পরের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বমূলক-সৌহার্দমূলক রাষ্ট্রের যেন বাস করতে পারি আনন্দের সঙ্গে, প্রেমের সঙ্গে, ভালোবাসার সঙ্গে- এই হোক আজকে আমাদের প্রার্থনা।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ধর্মের নামে যে হানাহানি, সেই হানাহানি বাংলাদেশে সবচেয়ে কম হয়। কিছু কিছু কুচক্রী আছে, যারা মাঝে মাঝে ধর্মের বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে ভাই-ভাইয়ের মতো বসবাস করেছে। বৌদ্ধ ধর্মের একটা প্রভাব, শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের সব জায়গায় সৃষ্টি করেছিল। এটা হচ্ছে শান্তির ধর্ম, কল্যাণের ধর্ম।’
তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য আমাদের আজ সারা বিশ্বে শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে। বিশ্বে আজকে যুদ্ধ হচ্ছে। একদিকে যেমন মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা চলে এসেছে, অন্যদিকে কাশ্মীরের মানুষেরা নির্যাতিত হচ্ছে। এখন এই মুহূর্তে রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে ইউক্রেনের নারী-শিশুরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। সমগ্র বিশ্বে অশান্তি বিরাজ করছে।
আর আমাদের দেশে ১৯৭১ সালে যে চেতনা নিয়ে স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছিলাম, সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, মুক্তসমাজ নির্মাণ, এখানে সমস্ত ধর্মীয় মানুষের স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে। কিন্তু দুঃখের কথা আজকের সেই জায়গা থেকে আমাদের দেশ বহু দূরে চলে এসেছে। আমাদের আজকে গণতান্ত্রিক অধিকার, ন্যূনতম ভোটের অধিকার, বাকস্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে, ভিন্নমত পোষণকারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত-নিপীড়িত হচ্ছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুকোমল বড়ুয়া, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী, বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য সুশীল বড়ুয়া, আবেদ রাজা, হাবিবুর রশীদ হাবিব, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইউনুস মৃধা, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি বৌদ্ধপ্রিয় মহাথের প্রমুখ।
Collected from BNP Fb page