ছুটিতে গ্রামে গেলেই মর্নিং ওয়াক করার তেজ বাড়ে আমাদের দুই বন্ধুর।আমি আর তামীম।দুজনেই মাশাল্লাহ বেশ নাদুস নুদুস পেটুক টাইপের আর ভোজন রসিক।৪০ মিনিট মর্নিং ওয়াক করে ১ কেজি কমালে মর্নিং ওয়াকের পর সেকুর হোটেলের গরম গরম ডিম পরটা আর কফি খেয়ে ২ কেজি বাড়িয়ে ফেলি।তা হোক,তবুও হাঁটা তো হচ্ছে!
এবার শীতের বন্ধে গ্রামে এসেছি আজ সকালে।তামীম সম্ভবত আরো কদিন আগেই এসেছিল।আজ আমার আসার খবর শুনেই আমাকে কল দিয়ে বলল,”শাতিল,কাল ছয়টায়?”
শুনেই খুশি হলাম।কেননা মর্নিং ওয়াক মানেই মর্নিং ভোজ,এটা ভালভাবেই জানি।বিগতদিনে আমরা এমন বহু মর্নিং ওয়াক করেছি।আর যেখানেই ভোজ,সেখানেই আমার উপস্থিতি থাকবেই।আনন্দে,উত্তেজিত কণ্ঠে সাথে সাথে বললাম,”হুম হুম অবশ্যই।পেট বেড়ে গেছে,কমাতে হবে।” তামীম সমর্থন দিয়ে বলল,”হুম দোস্ত আমারও।জোরে জোরে হাঁটব,আর ইয়ে না মানে দোস্ত……,টাকা নিয়ে বের হইস আরকি।” সঙ্গে সঙ্গে রেগে বললাম,”মানে?আমি কেন টাকা নেব?গত ছুটির শেষদিন আমি খাইয়েছিলাম,কাল তো তোর খাওয়ানোর কথা!” তামীম চাপা কণ্ঠে বলল,”দোস্ত!বিশাল অর্থ সংকটে আছি।প্লিজ।” তামীম কোনরকম শয়তান তা আমার জানা আছে।রাগ করে বললাম,”শোনো বৎস,পেটের সংকট দূর করিতে হইলে অর্থ সংকটকে গ্রাহ্য করা যাইবে না।আচ্ছা ঠিক আছে,তুমি যখন বলতেছ তোমার টাকা নাই,তো খাওয়া বন্ধ,শুধু হাঁটাই হবে।” “না না না!দুটোই হবে,”তামীম উদ্বেগের সাথে লাফিয়ে উঠল।এরপর বলল,” আচ্ছা দোস্ত,একটা ডিল হোক, আগে যে উঠবে সে খাবে,অর্থাৎ যাকে কল দিয়ে জাগাতে হবে,সে খাওয়াবে।” আমি বললাম,”ওকেই ডিল ফাইনাল।”
এরপর রাতে ঘুমাতে গেলাম যখন তখনই হঠাৎ একটা চিন্তা মাথায় আসল।তামীমকে ফেসবুকে নক দিয়ে বললাম,”আমি কল দিয়ে তোমাকে জাগাইলে তুমি যদি বলো যে তুমি ওয়াকে যাবা না?তখন?”
তামীম হাসির ইমো দিয়ে বলল,”আরে না না,আমি যাব।খাওয়া বলে কথা।মর্নিং ওয়াক বেশি প্রয়োজনীয় না হলেও মর্নিং ভোজ অতিব জরুরি।”
বললাম,”ঠিক আছে।মনে থাকে যেন।” একটু পর আবার মাথায় আসল আরেকটা বিষয়।তামীম আমার মতোই শয়তান।কেউই কারো চেয়ে কম না।আর শয়তানে শয়তানে ডিল হলে মাথায় শুধু শয়তানি চিন্তাই ঘুরে।আবার তাকে ফেসবুকে নক দিয়ে বললাম,”এই শোনো,একটা সময়সীমা আছে।ছয়টার আগে জাগাতে পারবা না,তুমি তো যেই শয়তান,দেখা গেছে তুমি খাওয়ানোর ভয়ে আজকে না ঘুমিয়ে ভোর তিনটা/চারটা থেকেই আমাকে কল দিচ্ছ,আর পরে খাওয়া দাবি করছ।কেননা,আমাকে জাগানো লেগেছে তোমার।অতএব,ছয়টার পর যাকে কল দিয়ে জাগাতে হবে সে খাওয়াবে।ওকেই?”
যেহেতু তামীম আমার চেয়ে কোন অংশে কম না,তাই সে বিচলিত না হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল আমাকে,”তুমি যেই ভণ্ড!যদি ঘড়িতে ১০ মিনিট কমিয়ে দাও আমি কল দেওয়ার পর???”
আমি হাসি দিয়ে বললাম,”আরে না না!তা কেন করব!আর সন্দেহ থাকলে উভয়ের কল লগের সময় ইন্টারনেশনাল টাইমের সাথে চেক করা হবে।দুই নম্বরির সুযোগ নাই।”
তামীমের একান্ত ইচ্ছা যেন সে নিরাপদে,নিশ্চিন্তে টাকা খরচ না করে খেতে পারে।তাই আবার বলে উঠল,”ওওওহহহহ শীট!দোস্ত আমার তো ব্যালেন্স নেই।দোস্ত কাল তুই খাওয়াস না,আমি পরশু?”
“না না!ডিল ইজ ডিল!কনফার্ম হয়ে গেছে।আর কোন কথা নাই। তোর বাসায় কি আর কারো ফোন নাই?”
“আছে।তাও।এমন করিস ক্যান!প্লিজ!”
বললাম,”কোন ফাঁকিবাজি না।আচ্ছা আরেকটা কথা,ধর আমি কল দিয়েছি,পরে তুমি বললা যে তুমি জাগো নাই!এইসব হবে না।মিনিমাম তিনবার কল দিতে হবে।তবেই কলদাতা আগে ঘুম থেকে উঠেছে বলে গণ্য করা হবে এবং তিনবার কল দেওয়ার পর না জাগলেও পরে খাওয়াতে হবে।”
তামীম কম নয়।ফাঁকিবাজিতে আমরা সেইম সেইম।সে সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল,”ধরো তোমার ফোন অফ!তখন?”
মনে মনে হাসছি!আসলেই আমরা দুজন একই প্রকার শয়তান।তামীমের প্রশ্ন শুনে একটু ঘাবড়ে গেলাম।চিন্তিত হয়ে বললাম,”ওউ!একটু ভাবতে হবে।” বললাম,”ফোন বন্ধ থাকলে ফেসবুকে ম্যাসেজ দিবি।কিন্তু সেটা তখনই কেবল গ্রহণযোগ্য হবে যখন ফোন বন্ধ থাকবে।ফেসবুকে ম্যাসেজ দেওয়ার আগে প্রমাণ দিতে হবে যে তুমি কল দিয়েছিলা আর আমার ফোন বন্ধ ছিল।প্রয়োজনে অন্য ফোন দিয়ে ভিডিও করে রাখবা যে আমাকে কল দেওয়ার পর মোবাইল বন্ধ বলছে।”
তামীম বলল,”যদি আমার ফোনে চার্জ না থাকে।আর আমি তোমার কল না শুনি?আর তারপর যদি তুমি ট্রিট দাবি কর?”
“তোমার ফোন বন্ধ থাকলে তোমার ব্যর্থতা।আমি প্রমাণ দেখাব যে আমি আগে কল দিয়েছিলাম আর তোমার ফোন বন্ধ ছিল।তারপর তুমি খাওয়াবা।”
“আচ্ছা যদি ওয়েটিং থাকে?ধর আমার কল ওয়েটিং এ আছে,তখন?”
বললাম,”ওয়েটিং এ থাকলে কল রিসিভ করা যায়।ফাঁকিবাজির চেষ্টা করছ কেন তুমি এত?”
“আরে না!ধর ঐ সময় GF এর সাথে কথা বলছি।তো রিসিভ করবো কীভাবে?GF এর কল কেটে দিলে যদি ব্রেক আপ হয়ে যায়?”
তামীম একের পর এক ফন্দি বের করছে।আমার অসহ্য লাগছে এখন।যুক্তি কী দেব বুঝছি না।রেগেমেগে বললাম,”তুমি এই ভুঁড়ি নিয়ে এমন কোন মেয়ে পটাতে পারবা না যে তোমার সাথে ছয়টা বাজে কল দিয়ে কথা বলবে।আর শুনো,মাত্রাতিরিক্ত প্যাঁচাল পাড়ার কারণে ডিল চেঞ্জ করা হল:কাল যে ই আগে উঠুক,তুমিই খাওয়াবা।নইলে মর্নিং ওয়াক বাদ।”
তামীম হেসে উঠল,”দোস্ত,আমাদেরকে হাল ছেড়ে দিলে চলবে না।মর্নিং ওয়াক বাদ দেওয়া যাবেই না।শরীর কমাতে হবে অবশ্যই।তাহলে দোস্ত ফাইনাল ডিল ওটাই হোক:তুই কাল খাওয়াবি,আমি পরশু।”
প্রতিবাদ ধ্বনি তুললাম জোর গলায়,”না না!হবে না,হবে না।যে পরে উঠবে ঘুম থেকে সে ই খাওয়াবে।”
তামীমও এবার ক্লান্ত,”আচ্ছা মানলাম।দেখি আল্লাহ কী করেন।রান করার মতো ড্রেসআপ করে আসিস।খাওয়াদাওয়াটা বড় ব্যাপার না,মর্নিং ওয়াকই আমাদের মূখ্য উদ্দেশ্য।”
“হাহাহা!হুম বুঝেছি,বুঝেছি।আর কথা বলো না।ঠিক আছে ঘুমাও।ভোরে উঠতে হবে আবার।ডিল ওটাই রইল ফাইনাল।”
“হাহাহা!ওকেই গুড নাইট।”
জার্নি করে এসেছি গ্রামে।শরীর ক্লান্ত।মোবাইলে ৫.৫০ এর এলার্ম দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি অল্পতেই।
পরদিন সকালে।এলার্ম টোন আমার ঘুম ভাঙাতে পারেনি।আমার ঘুম ভাঙল মোবাইল রিংটোনের শব্দে।চমকে গেলাম।হায় হায়!কল রিসিভ করতে তাড়াহুড়ো করে ফোন হাতে নিয়েই দেখি সাড়ে এগারোটা বাজে।ফোন রিসিভ করা মাত্রই শুনতে পেলাম তামীমের ঘুম জড়ানো কণ্ঠ,
“ইয়াহু…..!!!আমি আগে কল দিয়েছি!ইয়েস,ইয়েস।টাকা নিয়ে বের হও বাসা থেকে।তুমিই খাওয়াবা।”
“আরে কীভাবে কী?ডিলে কি এটা বলা ছিল না যে মর্নিং ওয়াক না হলে মর্নিং ভোজও হবে না? না না!হবে না,হবে না।আমি মানি না।”
———–সমাপ্ত———-