-‘স্যার স্যার, একটু দেখিয়ে দিবেন।’ মিষ্টি গলায় পরপর দুইবার স্যার বলল ছেলেটি।
আমি ছেলেটির দিকে তাকালাম। বয়স পাঁচ কিংবা ছয় হবে। স্কুল ড্রেস পড়া। কাঁধে ব্যাগ ঝুলছে। ছেলেটির এক হাতে কলম অন্য হাতে জমা বই।
একটা বেজে গেছে। ব্যাংকে তেমন একটা ভীড় নেই। ছেলেটিকে বসতে বললাম। ‘বাবু, তোমার নাম কি?’
-‘হুমায়ুন আহমেদ। ডাক নাম খোকা। আরেকটা ডাক নাম রাতুল। রাতুল বলে বাবা ডাকে আর খোকা বলে মা ডাকে।’
‘চমৎকার নাম। কোন শ্রেণীতে পড়?’ ছেলেটির কথা বলার ভংগী আমার ভালো লাগলো।
-‘দ্বিতীয় শ্রেণী। আমার রোল নং ও কিন্তু দুই।’
‘বেশ ভালো। নিজের নাম লিখতে পার?’ আমি মুগ্ধ হয়ে কথা শুনছি।
-‘বাংলাতে পারি। ইংরেজিতে পারি। আরবিতে পারি না। তবে আরবি হরফ বলতে পারি।’ একটু লজ্জিত ভাবে বলল ছেলেটি।
‘আচ্ছা পরে শিখে নিও। তুমি কিভাবে ব্যাংকে হিসাব খুললে?’ আমার ছেলেটির সাথে কথা বলতে ভালো লাগছিল। তাই জিজ্ঞেস করলাম।
-‘একদিন স্কুলে এক আংকেল এসে বই দিয়ে বলল এখানে নাম লিখতে আর পরেরদিন মাকে ছবি নিয়ে আসতে। পরেরদিন ছবিসহ মা-বাবা দুজনকেই নিয়ে আসলাম। হয়ে গেল। এখন এসেছি টাকা জমা করতে।’
‘আচ্ছা আমি এইবার লিখে দিচ্ছি। পরেরবার কিন্তু তোমাকে লিখতে হবে।’
-‘আচ্ছা।’
‘এখানে হচ্ছে তারিখ, এখানে তোমার নাম, এখানে হচ্ছে হিসাব নং, এখানে ১০ টাকা অংকে, এখানে দশ টাকা কথায়। বুঝতে পেরেছ?
-‘হুম। সোজা। হিসাব নং হচ্ছে রোল নাম্বারের মত।’
‘ঠিক বলছ। এবার ঐ কাউন্টারে যেয়ে লাইনে দাড়িয়ে টাকা জমা দিয়ে দাও।’
ছেলেটি নাগাল পাচ্ছে না কাউন্টারের। কাউন্টারের উচ্চতা ছেলেটির চেয়ে বেশি। হাত উচু করে ১০ টাকা কাউন্টারে বসা অদৃশ্য অফিসারকে দিল। এদিকে অফিসারের কাছেও অদৃশ্য থেকে গেল ছেলেটির মুখ।
পরবর্তীতে আর কখনো ছেলেটিকে আমার লিখে দিতে হয়নি কিংবা লাইনে দাঁড়াতে বলতে হয়নি। ও শিখে নিয়েছে।
যে ছেলেগুলো আজ কাউন্টারের নাগাল পাচ্ছে না, সে ছেলেগুলোর অদৃশ্য মুখই হয়তো একদিন দেশটির অর্থনীতিকে মাথা উচু করে দাঁড়া করাবে….