12 C
New York
Sunday, December 3, 2023

পিটার প্যান সিনড্রোম: বড় হতে না চাওয়ার একটি রোগ!

- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -

পিটার প্যান সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তি হলো তারা, যারা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও জাগতিক সকল দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে মুখ ঘুরিয়ে রাখে, সমাজ সংসারের অংশ হওয়ার পরিবর্তে সেখান থেকে মুক্তির পথ খোঁজে।সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তারা বড় হতে বা সাবালকত্ব লাভ করতে চায় না। তারা অনেকটা বইয়ের পাতার পিটার প্যানের মতোই ভাবে:

- Advertisement -

“স্বপ্ন সত্যি হয়, শুধু যদি আমরা তীব্রভাবে তাদের কামনা করি।”

কিন্তু তারা বুঝতে চায় না, স্বপ্ন সবার ক্ষেত্রে সত্যি হয় না। স্বপ্ন সত্যি হয় শুধু তাদের, যারা কেবল স্বপ্ন দেখাতেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখে না, বরং সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে কঠোর পরিশ্রমও করে।

আর এই না বোঝার ফল হয় মারাত্মক। একটি সুন্দর-সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে তারা নিজ হাতে গলা টিপে মারে। ক্যারিয়ারে যেমন তারা কখনোই নিজেদের যোগ্যতার সমতুল্য অবস্থানে পৌঁছাতে পারে না, তেমনই তারা ব্যর্থ হয় ব্যক্তিজীবনে কোনো অর্থবহ ও টেকসই সম্পর্ক গড়ে তুলতেও।

এভাবেই সম্ভাবনাময় ২০ বছরের টগবগে তরুণেরা পরিণত হয় অসুখী, শেকড়বিহীন ৪০ বছরের মধ্যবয়স্কে, কিংবা খিটখিটে, বদমেজাজি ৬০ বছরের বৃদ্ধে।

পুরুষরা আক্রান্ত হয় বেশি-

ইউনিভার্সিটি অফ গ্রানাডা হতে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়েছে, পিটার প্যান সিনড্রোমে নারী-পুরুষ উভয়েই আক্রান্ত হতে পারে, তবে নারীদের তুলনায় পুরুষদের এই সিনড্রোমে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। কিংবা বলা যেতে পারে, পিটার প্যান সিনড্রোমে আক্রান্তদের বেশিরভাগই পুরুষ।

এর পেছনে প্রধান কারণ হতে পারে আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা, যেখানে আজো নারীদের চেয়ে পুরুষদের কাঁধেই বেশি দায়িত্বের বোঝা চাপে। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও অনেক পুরুষই সেই চাপ সামলানোর যোগ্য হয়ে ওঠে না, ফলে তাদের মাঝে সমস্যাটি দেখা যায়।

যেমন: ৩০ বছর বয়সী একজন পুরুষের কাছে হয়তো দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করা হচ্ছে, কিন্তু মানসিকভাবে সে এখনো একজন কিশোর রয়ে গেছে। তাই সে ভাবছে, তার উপর অর্পিত দায়িত্বগুলো অন্য কেউ পালন করে দেবে, যেমনটি বড়রা করত সে কিশোর বয়সী থাকতে।

আবার নারীদের পিটার প্যান সিনড্রোমে কম ভোগার পেছনে বড় কারণ হতে পারে নারীদের মানসিক পরিপক্বতাও। পুরুষদের চেয়ে নারীরা মানসিকভাবে দ্রুত পরিণত ও বাস্তববাদী হয়ে ওঠে, ফলে যেকোনো বাস্তব পরিস্থিতিতে পুরুষদের চেয়ে তারাই আগে সাড়া দেয়, এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে নিজেদের অভিযোজিত করতে পারে।

লক্ষণ ও উপসর্গ-

◾স্বাভাবিক কর্মজীবন পরিচালনা ও সম্পর্ক রক্ষায় ব্যর্থতা।

◾যেকোনো দায়িত্ব থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাওয়ার মানসিকতা।

◾অর্থনৈতিক দায়িত্ব গ্রহণে ব্যর্থতা।

◾এক কাজে বেশিদিন মন বসাতে ব্যর্থতা

◾অবাস্তব স্বপ্ন দেখা।

◾লিঙ্গভিত্তিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা।

◾ঘরের কাজে উদাসীনতা।

◾সম্পর্ক তৈরিতে অনীহা।

◾স্মৃতিকাতরতা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয়।

◾মাদকাসক্তি।

◾অন্যদের দায়ী করা।

কারা পিটার প্যান নয়?

যেকোনো উদাহরণের সাথে নিজেদের মিল খুঁজে পাওয়া মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। এতক্ষণ পিটার প্যান সিনড্রোমের উপসর্গগুলো সম্পর্কে জানার পরও হয়তো অনেকের মনে হচ্ছে, “আমার সাথে তো এই উদাহরণগুলো মিলে যায়। তাহলে আমিও কি একজন পিটার প্যান?”

যারা এমনটি ভাবছেন, তারা জেনে স্বস্তিবোধ করতে পারেন, দায়িত্ব গ্রহণে অস্বীকৃতি কিংবা সারাজীবন ছোট থাকার ইচ্ছা শুধু পিটার প্যানদের একক মালিকানাধীন বৈশিষ্ট্য নয়। কমবেশি সব মানুষের মাঝেই এই বৈশিষ্ট্যগুলো দেখা যায়। সুতরাং আপনার মাঝেও এই বৈশিষ্ট্যগুলো রয়েছে বলেই যে আপনিও একজন পিটার প্যান, এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই।

দায়িত্ব গ্রহণে ভয় মানেই পিটার প্যান সিনড্রোম নয়।
আপনি হয়তো দায়িত্ব পালনে শুরুতে অস্বীকৃতি জানান, যেমনটি আরো অনেকেই করে থাকে। কিন্তু আপনি শেষ পর্যন্ত দায়িত্বটি পালন করেন তো? যদি উত্তর হয় হ্যাঁ, তাহলে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, আপনি পিটার প্যান নন। আবার দুঃসময়ে বাস্তবতা থেকে পালিয়ে বাঁচার কথা মনে হলেও, পরে ঠিকই নিজের মনকে মানিয়ে নিতে পারেন তো? বাস্তবতাকে মোকাবেলা করেন তো? যদি উত্তর হয় হ্যাঁ, তাহলে আপনি পিটার প্যান নন। আবার বড় হতে না চাওয়া, চিরদিন ছোট থাকতে চাওয়া, অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করা? এগুলোও মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। এসব মানসিকতা থাকা সত্ত্বেও যদি আপনি বর্তমানকে উপভোগ করতে পারেন, ভবিষ্যতের ব্যাপারে সচেতন হন, সর্বোপরি বাস্তবতাকে স্বীকার করার সৎ সাহস রাখেন, তাহলে আপনি পিটার প্যান নন।

পিটার প্যান সিনড্রোমের কারণ কী?

ঠিক কী কী কারণে একজন মানুষ হয়ে ওঠে পিটার প্যান? এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো কার্যকারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে মনোবিজ্ঞানীরা এ ধরনের সিনড্রোমের পেছনে বেশ কিছু কারণকে দায়ী করে থাকেন।

প্রথমত, যেসব শিশুকে ছোটবেলা থেকে বাবা-মা অনেক বেশি শাসনে বা আদরে রাখে, কিছু করতে দেয় না, তারা ক্রমশ পরনির্ভরশীল হয়ে পড়ে। তারা ভাবে, তাদের কাজগুলো সবসময় অন্যরাই করে দেবে। ফলে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও তারা আত্মনির্ভরশীল ও স্বাবলম্বী হতে পারে না।

দ্বিতীয়ত, যেসব শিশুদের ছোটবেলায় একা একা কাটে, কোনো সমবয়সী বন্ধুবান্ধব থাকে না, তারা নিজেদের তৈরি করা এক কাল্পনিক জগতে বিচরণ করে। বড় হওয়ার পরও তাদের পক্ষে সেই কল্পনার দুনিয়া থেকে বাস্তব দুনিয়ায় ফিরে আসা সম্ভব হয় না।

তৃতীয়ত, কোনো শিশু যদি ছোটবেলায় খুব বাজে কোনো অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়, যেমন তার বাবা-মায়ের মধ্যে অশান্তি চলে বা তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়, কিংবা শিশুটি (ছেলে কিংবা মেয়ে) যৌন নিপীড়নের শিকার হয়, সে এক ধরনের ট্রমার মধ্য দিয়ে যায়। তার মনে নানা ধরনের অসুখ বাসা বাঁধে। এগুলো থেকে বাঁচতে সে নিজের মনেই এক ধরনের বিকল্প দুনিয়া তৈরি করে নেয়, যেখানে সে নিজেকে সুখী কল্পনা করে। এদিকে বাস্তব দুনিয়ার প্রতি তার মনে গভীর ঘৃণা বা ভীতি জন্মায়। তাই বাস্তব দুনিয়ার কারো সাথেই সে ভালো করে মিশতে পারে না, কোনো কাজ সহজভাবে করতে পারে না, কোনো দায়িত্ব গ্রহণের সাহস করে উঠতে পারে না।

আপনার করণীয় কী?

এতক্ষণ এই লেখাটি যারা মনোযোগ সহকারে পড়লেন, তাদের অনেকেই হয়তো এখন নিজেকে পিটার প্যান ভাবতে শুরু করেছেন। কিংবা আপনার পরিচিত কাউকেও আপনার পিটার প্যান বলে মনে হতে পারে। তাছাড়া পিটার প্যানে পরিণত হওয়ার কারণগুলো জানার পর আপনার পরিচিত কোনো শিশুর কথাও মনে হতে পারে, যে হয়তো ভবিষ্যতে পিটার প্যানে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

যদি আপনি নিজেকে, বা কাছের কোনো মানুষকে পিটার প্যান বলে মনে করেন, তাহলে আপনার উচিৎ হবে অতিসত্বর কোনো মনোচিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। কেউ যদি পিটার প্যান হয়, সেই দোষ কেবল তার নিজের নয়, তারও অধিকার আছে একটি সুস্থ জীবন লাভের। আর সেই সুস্থ জীবন লাভে সাহায্য করতে পারেন মনোচিকিৎসকের।

আর যদি আপনার মনে হয় আপনার পরিচিত কোনো শিশু অস্বাভাবিক আচরণ করছে, জানার চেষ্টা করুন তার এমন আচরণের কারণ কী। যদি সম্ভব হয় তার ঘনিষ্ঠ হোন, তার বিশ্বাস অর্জন করুন। হতে পারে বিশ্বাসযোগ্য ও সহানুভূতিশীল কারো সান্নিধ্য তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারে। আর যদি আপনার মনে হয় শিশুর অস্বাভাবিকত্বের পেছনে তার বাবা-মা বা অভিভাবকের দায় আছে, তাহলে এই লেখাটি পড়তে দিতে পারেন তাদেরও। সর্বোপরি শিশুটির অবস্থা যদি খুব খারাপ হয়, তাহলে তাকেও একজন মনোচিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া আবশ্যক।

- Advertisement -

Related Articles

Leave a Comment:

Stay Connected

22,025FansLike
3,912FollowersFollow
18,600SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker

Refresh Page