বিড়াল বড় আদরের প্রাণী। খাওয়ার সময় এসে আশেপাশে ঘুরে। কিছু না পেলে ফেল ফেল করে তাকায়। কিছু পেলে তৃপ্তির সাথে খায় আর লেজ নাড়ে।
.
বিড়াল মানুষের কাছে কাছে থাকতে চাই। পোষা বিড়াল কোলে উঠে বসে। বিড়াল রাতে মানুষের সাথে ঘুমাতে ভালোবাসে। প্রায় দেখা যায় পায়ের কাছে শুয়ে আছে। লাথি খেয়েও সরে না, মিউ মিউ করে কেঁদে কেঁদে আবার কাছে ভিড়ে।
.
ছোট ছেলে মেয়েরা বিড়াল কে খুব আদর করে। অনেকে পোষা বিড়ালকে মিনু মিঠু মিশু বলে ডাকে।
.
.🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴
আমাদের নবীজিও বিড়াল খুব ভালবাসতেন। বিড়ালকে তিনি গায়ে পিঠে হাত বুলিয়ে আদর করতে ন। সামনে বসিয়ে খাওয়াতেন। তাকে দেখা মাত্র বিড়ালও মেও মেও করে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতো।
কেবল নবীজি নন, তার অনেক সাহাবীও বিড়াল ভালোবাসতেন।
.
.
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ছিলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক প্রিয় সাহাবী। তিনি কিছু শুনলে তা কখনো ভুলতেন না। রাসুলের কথা শোনা মাত্র তিনি তা মুখস্ত করে রাখতেন। তিনি সবচেয়ে বেশি হাদিস বর্ণনা করেছে।
.
আবু হুরায়রার বাড়ি মদিনা থেকে অনেক দূরে। সত্যের ডাক সেখানে পৌঁছালো। তিনি কাবিলা ছেড়ে মদীনায় এলেন। আসার সময় বাড়ির জিনিসপত্র প্রায় সবকিছুই ছেড়ে ফেলে এলেন। সাথে নিয়ে এলেন একটি পোষা বিড়াল।
.
এ আবার কি রকম কাণ্ড! কিন্তু আন্তরে যাদের দরদ থাকে তারাই এমন কাজ করেন। ঘরের দামি দামি আসবাব তো প্রাণ হীন; জড় পদার্থ। ওগুলো ফেলে এলেও ওরা ব্যথা পাবে না। কিন্তু বিড়াল তো জড় পদার্থ নয়, প্রাণ আছে; আর তাই ব্যথা ও আছে। ফেলে এলে দুঃখ পাবে, কাঁদবে। তাই আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বিড়ালটিকে সাথে নিয়ে এলেন। বিড়ালের প্রতি তার দরদ দেখে অনেকে হাসি ঠাট্টা করলো।
.
.
নবীজি একটি মূক প্রাণীর প্রতি আবু হুরায়রার দরদ দেখে খুশি হলেন। বিড়ালটি সব সময় সন্তানের মত তার কাছে কাছে থাকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে একদিন কৌতুক করে ডাকলেন আবু হোরায়রা বলে। হোরায়রা মানে ছোট বেড়াল। আবু হুরায়রা মানে বিড়ালের বাপ।
.
আবু হুরায়রা কিন্তু তার আসল নাম ছিল না। মুসলমান হওয়ার আগে তার নাম ছিল আব্দুস শামস ইবন সাখর। ইসলাম গ্রহণ করার পর তার নাম হলো আব্দুর রহমান।
.
রাসুলকে আবু হুরায়রা খুব বেশি ভালবাসতেন আর রাসূলের কৌতুকও তার কাছে অতি ভাল লাগতো।
আব্বা আম্মার দেওয়া নাম এর চেয়ে নবীজির দেওয়া আবু হুরায়রা নামই তার কাছে বেশি প্রিয় মনে হতো। পরবর্তীতে এই নামেই তিনি পরিচিত হলেন। আস্তে আস্তে লোকজন তার আসল নাম ভুলে গেলো। তিনি আবু হোরায়রা বা বিড়ালের বাপ নামেই মুসলমান জাহানে পরিচিত হয়ে রইলেন।
.
আমাদের প্রিয় নবীর একটি মাত্র চাদর ছিলো। রাতে তিনি চাদরটি গায়ে দিয়ে ঘুমাতেন। দিনের বেলা তা গায়ে দিয়ে বের হতেন।
.
আরব দেশে দিনের বেলা প্রচন্ড গরম। রাতে ভীষণ শীত। একেবারে হাড় কাঁপানো শীত।
.
আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ রাত জেগে কাটাতেন। নবী হওয়ার আগেও শেষ রাতে তিনি জেগে থাকতেন। তারার মেলা দেখতেন। গাছপালা আকাশ বাতাস কি করে হলো তা নিয়ে ভাবতেন।
.
খুব ভোরেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে আসতেন। তাহাজ্জুদ পড়তেন। সুবেহ সাদিকের সময় মসজিদে যাওয়া ছিল তার সারা জীবনের নিয়মিত অভ্যাস । শুধু তিনি একাই নন ,তার সাহাবীগণও প্রায় সকলেই সুবেহ সাদিকের সময় মসজিদে উপস্থিত হতেন ।কারন এটা ছিল ইবাদত কবুলের সময়।
.
কাফেররা কাজ করতো নবীর উল্টো। তারা গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকতো, অনেক হইচই ও আনন্দ উল্লাস করতো, আর সকালবেলা ঘুমাতো।
.
আমাদের নবী প্রতিদিনের ন্যায় শেষ রাতে মসজিদে যাওয়ার জন্য তৈরি হলেন। গায় দেওয়ার জন্য চাদরটি নিতে গিয়ে দেখেন চাদরের এক কোনে শুয়ে আছে একটি বিড়াল। চাদরটি তিনি অতি সহজে টেনে নিতে পারেন। কিন্তু তাতে হয়তো বিড়ালর ঘুম ভেঙে যাবে। বেচারার ঘুম ভাঙাতে তার ইচ্ছে হলো না। তিনি দাঁড়িয়ে রইলেন। এদিকে সুবেহ সাদিক শেষ হয়ে ফজরের নামাজের সময় হয়ে এলো। তখনো বিড়ালটির ঘুম ভাঙ্গেনি। ফজরের নামাজের জন্য সাহাবীগণ তার অপেক্ষা করছেন। তিনি মসজিদে গেলে একসাথে জামাত হয়। তাই না গেলেও নয়।
কিন্তু বিড়াল টা তো অঘরে ঘুমাচ্ছে। উঠবার কোন লক্ষণই দেখা যায় না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন দিন কাউকে কষ্ট দেন না। ঘুম ভাঙা বার মতো কষ্টও না। বিড়ালটার ঘুম নষ্ট করতেও তার মন চাইলো না।
বড় চিন্তায় পড়লেন তিনি। শেষ পর্যন্ত তিনি কি করলেন? এমন কাজ করলেন, যা শুনলে অবাক হতে হয়। তার জীবনে বহু কাজই তো অভাবনীয় ও বিস্ময়কর।
তিনি একটি ছুরি হাতে নিলেন। চাদরের যে কোনায় বিড়ালটা ঘুমিয়ে ছিলো, ঐ কোনাটায় কেটে ফেললেন। তারপর কোনা কাটা চাদরটা গায়ে দিয়ে মসজিদে গেলেন, কিন্তু বিড়ালটার ঘুমও ভাঙলো না।
নবী ও বিড়ালের গল্প
- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -