জাভি-বলের ব্যাসিক চেঞ্জড টা আসলে কি? মানে হঠাৎ কি হলো যে বার্সা যেখানে ম্যাচ বাই ম্যাচ গোলের জন্য স্ট্রাগল করছিলো সেখানে গোল এত এভেইলেবল হলো? কিভাবে মিডফিল্ডের স্ট্রাগল কমে গেলো? বা ডিফেন্স সাপোর্ট সিস্টেমের ইম্প্রুভমেন্ট এর রহস্য ই বা কি?
লেখাটাকে আমি ২ ভাগে ভাগ করবো। তাহলে বুঝতে এবং বুঝাতে সহজ হবে।
১.
আমাদের আগের সিস্টেম কি ছিলো?
জাভির ইনিশিয়াল এপ্রোচ এবং তার আগের কোম্যান এর এপ্রোচ এ বার্সা যে ৪-৩-৩ ফলো করতো সেখানে বুস্কেট কিছুটা নিচে এসে পিকে আরাউহো এর সাথে একটা ট্রায়ো তৈরি করতো। অর্থাৎ ফাইনাল লাইন অফ ডিফেন্স এ দুইজন শেষ বয়সের প্লেয়ারের সাথে একজন রুকি যার ডিসিশান মেকিং নিয়ে প্রশ্ন আছে। এমন অবস্থায় যদি বুস্কেট যখন এডভান্সড হয়ে যেতো তখন সিবি-সিডিএম লাইনের মাঝে একটা গ্যাপ সৃস্টি হতো।ওদিকে ফুলব্যাক রা এডভান্স রোলে যেতো কারন টাচ লাইন ধরে রাখার মত প্লেয়ার ছিলোনা একটাও। ফুলব্যাক রা লাইন ধরে এডভান্স হওয়ার কারনে সেন্টার মিড রা বাস্তবিক ভাবেই সেন্টারফিল্ড অকুপাই করে রাখতো। এক্ষেত্রে একজন একটু নেমে বুস্কেট পিকে কে শিল্ড করার চেস্টা করতো। কোম্যানের সময় যে কাজ করতো পেদ্রি। পেদ্রির ইঞ্জুরিতে ফ্রাংকি। এই রোলের প্লেয়ার একটু নেমে এসে ডাবল পিভট টাইপ একটা রোলে বুস্কেট কে শিল্ডিং এবং গ্যাপ পুরন করার চেস্টা করতো। বাকি আরেকজন এডভান্স হয়ে ফ্রন্ট লাইন কে সাহায্য করার চেস্টা করতো। কোম্যানের সময় ফ্রাংকি এবং জাভির ক্ষেত্রে গাভি।
কিন্ত একজন এডভান্স হওয়ার কারনে এরিয়া ১৪ বা আইডেন্টিকাল কোনো না কোনো পজিশন এ গ্যাপ থাকতোই। যেটা কাভার করার জন্য ফ্রন্ট লাইনের কেউ না কেউ ড্রপ করতোই৷
এতে করে কয়েকটা আউটকাম চলে আসতো। প্রথমত ফুলব্যাক রা এডভান্স হলে একটা গ্যাপ সৃস্টি হয়, যেটা মর্ডান ফুটবল এ ফুলব্যাক রা ওয়ার্ক রেট আর স্পিড দিয়ে কাভার দেয়। আলবার নাই কোনো ব্যাকাপ, নাই রেস্ট। ফ্যাটিগ ফ্যাক্টর এ এই গ্যাপ সে কাভার করতে পারতোনা, বুস্কেট রিলেটেড গ্যাপ আছে, ফ্রন্ট লাইনে গ্যাপ আছে।
যে গ্যাপ গনহারে সবাই এক্সপ্লয়েট করতো রেগুলারলি। খেয়াল করে দেখবেন যে জাভির প্রথম দিকেও এই বুস্কেট এর পজিশনাল কারনে আমরা ৩ভার্সেস ২ বা আউট নাম্বারড হয়ে গোল খাইছি। আবার ফ্রন্ট লাইনের গ্যাপের কারনে অপজিশন হাফে আউটনাম্বারড হতে হতো। ওই গ্যাপ অপজিশন দখল করতো,ওয়ান টু করার যায়গা ন্যারো হতো। আল্টিমেট রেজাল্টে গোল আসছিলোনা।
২.
তাহলে হঠাৎ কি জাদুর কাঠি দেখালো জাভি?
জাভি কয়েক জায়গার ব্যাসিক চেঞ্জ করে ফেলেছে। এবং সেইটাই বড় টনিক
★ স্টেপ ১- ফুলব্যাক দের রোল চেঞ্জ
আগে লাস্ট লাইন অফ ডিফেন্স ছিলো দুই সেন্টার ব্যাকের সাথে সিডিএম মানে বুস্কেট। জাভি এখন বটম ট্রায়ো ফর্ম করে দুই সেন্টার ব্যাকের সাথে একজন ফুলব্যাক দিয়ে৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জর্দি আলবা নেমে পিকে আর আরাউহো এর সাথে একটা থ্রি ম্যান লাইন মেইন্টেইন করে। আর আলভেস কিছুটা উঠে এসে বুস্কেট এর সাথে অনেকটা ডাবল পিভট এর মত সেটাপ ফর্ম করছে।
এতে করে বুস্কেট এর ট্রাক ব্যাক ডিউটি কমে গেছে, এবং আলভেস এর পাসিং এবিলিটি অসাধারণ হওয়ায় বার্সার বল ডিস্ট্রিবিউশন আরো অসাধারণ হয়ে গিয়েছে।
★ স্টেপ ২- সেন্টার মিড ডুয়ো কে মোর অফেন্সিভ সেটাপ দেয়া।
কোপা তে বিলবাও এর কাছে হারার পর জাভির সব থেকে বড় রেভুলোশনারি এক্ট হলো এইটা৷ দুই সেন্টার মিডের অফেন্সিভ লাইনে ইনভলভমেন্ট আরো ভিসিবল হয়েছে। এতে করে বার্সা এখন ফ্রন্ট লাইনে সবসময় একটা ফাইভ ম্যান থ্রেট তৈরি করতে চেস্টা করছে।
ব্যাপার টা যে শুধু থ্রেট তা নয়। বরং ভার্সেটাইলি একটা ইমপ্যাক্ট।
পেদ্রি, ফ্রাংকি, ফেরান লিংক আপে ভালো, গাভি এর অফেন্সিভ সেন্স যথেস্ট ভালো এবং ইম্প্রুভ করবে, লুক, আউবা এয়ারে ভালো।সব রকমের থ্রেট ই আছে।
আরেকটা রেভুলোশনারি ব্যাপার হল টাচ লাইন উইংগার দের ব্যাবহার।
বার্সার ফ্রন্ট লাইনে এসে ওভার ক্রাউডেড করার ব্যাপার টা আগে সুন্দর ক্লিক করতো মেসির কারনে। অপনেন্ট যতই ভালো ডিফেন্স করুক মেসি কিছু না কিছু করে ফেলতো। কিন্ত মেসির পর আসলে ফাইনাল লাইনে এসে আউটকাম আসছিলোনা। যেটা জাভি অসাধারণ ভাবে সলভ করছে।
দুই সেন্টারমিড সহ ৫/৬ জন যখন ফাইনাল থার্ডে এসে থ্রেট ক্রিয়েট করে তখন অপনেন্ট ও ম্যান টু ম্যান ডিফেন্স করছে। এইখানে টাচ লাইনের ক্যালমা। আদামা হোক বা ডেম্বেলে। দুইজনের কাউকে ই আসলে একজন ডিফেন্ডার দিয়ে ডিসপোস করা যায়না। বিশেষ করে আদামা কে। কারন তার স্পেশালিটি ই টেক ওয়ান। সে স্পিড আর ফিজিক দিয়ে প্লেয়ার বিট করে দেয়৷ ইপিএল এ ও সে এইদিক দিয়ে স্পেশাল ছিলো। সুতারাং আদামার/ডেম্বেলের টাচ লাইনে মুভমেন্ট এ অপনেন্ট এর ডিফেন্ডার মুভ করতেছে। অন্য প্লেয়ার রা স্পেস পাচ্ছে আরো বেশি।যেহেতু ফ্রন্ট লাইনে আরো ভালো বল হোল্ডার,ডিস্ট্রিবিউটর,লিংক আপ করার মত প্লেয়ার আছে। এই স্পিড এর আউটকাম যদি এভারেজ ও হয়, বার্সা এডভান্টেজ নিতে পারতেছে।এবং প্ল্যান গুলো ওয়ার্ক আউট করছে।
ফলাফল, ১১ ম্যাচের ৬ টায় ৪ গোল করে। তাও রিয়াল মাদ্রিদ, এতিম, নাপোলি, ভ্যালেন্সিয়া, বিলবাও এর মত টিম।
বার্সার এই খেলা পর আমি নিজেও হালান্ড অবসেসড হয়ে যাচ্ছি। আসলে এমন সিস্টেমের ফ্রন্টে তুখোড় ফিনশার থাকলে কি পরিমান মাখন যে হবে তা ভাবলে মুখে পানি আসছে।
কিন্ত ব্যাপার হলো, সিস্টেমের সাথে এডাপ্ট করার মত প্লেয়ার কয়েক পজিশনে ইম্পর্ট্যান্ট। নাম্বার নাইনের বাইরে একজন সেন্টার ব্যাক, একজন ফুলব্যাক এবং একজন মিডফিল্ডার তো নেক্সট সিজনে লাগবেই।
ইঞ্জুরির ব্যাপার ও আছে।
তবে সাইনিং যদি জাভির কথা এবং চাহিদা মত হয় তাইলে যারে ই আনুক আমার আর কোনো প্রশ্ন নাই। প্রিন্স বোয়েটাং রে যদি জাভি আনতে বলে আমি তাতেও খুশি। কারন জাভির ব্যাসিকে কোনো ভেজাল নাই। হ্যা, ইমপ্লিমেন্টেশন বা গেম রিডিং সহ অনেক ব্যাপার থাকে যেগুলা টাইম টু টাইম ইম্প্রুভ হয়৷ জিদান যেমন সময়ের সাথে তুখোড় হইছে,ওরকম। আর এসব বিষয়ে গার্দিওলা ও ১০০% সঠিক হয়না। সুতরাং জাভির ও ভুল হবে, সেখান থেকে শিখবে। কিন্ত ব্যাসিকের যায়গা জাভি ১০০% ক্লিয়ার৷ এবং এইটাই ইম্পর্ট্যান্ট..!