9.6 C
New York
Saturday, December 9, 2023

জমিদার মিসির আলি

- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -

হাসপাতালের কাজ শেষ করে বাড়িতে এলাম রাত ১টার দিকে,এসে দেখি ঘরের বাতি জলছে বুঝতে পারলাম আমার বউ আমার জন্য অপেক্ষায় আছে, আমি ঘরে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বউ এর কাছে গেলাম, আমাকে দেখেই সে বলল ডাক্তার সাহেব ঘরে নতুন বউ ফেলে রেখে হাসপাতালে রুগীদের সাথে সময় দিতে কি খুব ভালো লাগে? আমি নিলার কথায় স্পষ্ট বুঝতে পারলাম ভালোবাসাহীনতার অভিমান জমেছে তার মনে, আমি নিলাকে বললাম ,দেখো আমার হাসপাতালে পর্যাপ্ত ডাক্তার নেই যায় কারণে আমার একটু বেশি সময় ধরেই সেখানে থাকতে হয়, আর বোঝোই তো গ্রামের ডাক্তার! কার কোন সময় কখন কি সাহায্য দরকার সেটাও দেখা লাগে।
নিলা বলল আচ্ছা, ঠিক আছে আমি ভাত বাড়ছি তুমি খেয়ে নাও বলেই ভাত বাড়তে লাগল।
আসি ফোনটা পাশে রেখে খাওয়া শুরু করলাম।


ভাত খাওয়ার মাঝ পথে কেউ একজন ফোন দিলো আমায়, নিলা বলল এখন ফোন ধরার দরকার নেই আগে খেয়ে নাও,বলেই ফোনটা দূরে সরিয়ে রাখলো। কিছু সেকেন্ড পর আবার ফোন এলো আর নিলা বলল এখন ফোন ধরার দরকার নেই, আগে খেয়ে নাও ।আমি খাচ্ছি। ফোনটা আবারও বেজে উঠল এবার আমি নিলাকে বললাম ফোনটা আমাকে দাও, হয়তো কারো আমাকে খুব প্রয়োজন তাই ফোন দিচ্ছে ,নিলা বলল এই নাম্বার তো আপনার সেভ না, এটা অপরিচিত কারো নাম্বার ,আমি বললাম ডাক্তারের নাম্বার অনেকের কাছেই থাকে তাই আমার ফোনটা ধরা উচিত, নিলার থেকে ফোনটা নিয়ে কল রিসিভ করলাম।

- Advertisement -

ফোনের অপর প্রান্তে স্পষ্ট কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে ,লোকটি আমাকে বলল ,আমার বাবা খুব অসুস্থ আপনি তারারাতি সাহেবনগর বড় মসজিদের কাছে চলে আসুন । আমি বললাম ,খুব সিরিয়াস কিছু না হলে সকালে যায়?সাহেবনগর তো শহর থেকে বেশ দূরে আর শহরের অনেক গভিরে।তিনি আমাকে বললেন ,আপনি একটু দ্রুত চলে আসুন আমার বাবার কনডিশন অনেক খারাপ দেরি করলে খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারে । আমি বললাম দেখুন এখন তো রাত ১টা বাজে এখন তো কোনো গাড়িঘোড়া পাবো না সঠিক সময়ে যেতে পারব কিনা জানিনা,তবে আমি আসছি ,কথাগুলো বলেই ফোনটা কেটে দিলাম আর নিলাকে বললাম,এখুনি সাহেব নগরের একজন রুগির বাসায় যেতে হবে খুব আরজেন্ট তুমি খেয়ে নিও বলেই বাসা থেকে বেড়িয়ে পরলাম ।
জানি কিছুই পাবো না ,তাই কোনো আশা না করেই
বাইরে বেড়িয়েই দেখি একটা অটো দারিয়ে আছে, আমি বললাম, সাহেবনগর যাবো,যাবেন?তিনি বললেন ওঠেন,আমি অটোতে উঠে বসলাম, আর অটো চলতে শুরু করল, জঙ্গল পেরিয়ে নদী পেরিয়ে দুঘন্টা চলার পর সাহেবনগর পোঁছালাম এবং চালক আমাকে একটা বাড়ির গেইটের সামনে এসে দাঁর করালেন তারপর আমি অটোথেকে নেমে ভাড়া দিতে যাবো তখন অটোটি স্টাট দিয়ে চলেগেলেন, আমি পিছন পিছন একটু দৌরে দিয়ে দু-তিনবার বললাম আপনার টাকা নিয়ে যান ,কিন্তু তিনি যেন আমার কথা শুনেও টাকা না নিয়ে চলে গেলেন কিন্তু কেন গেলেন বুঝতে পারলাম না, লোকটি যেই বাড়িটির সামনে নামিয়ে দিলেন আবার যেখানে এসে দারালাম, আর তখনই একজন গেইটখুলে আমাকে ভেতরে আসতে বললেন, যেন আমি গেটের সামনে দারিয়ে আছি সেটা তিনি জানতেন ,আমি লোকটির পিছন পিছন হেটে ঘরের ভিতর ঢুকলাম। আমাকে একটি বৃদ্ধ লোকের কাছে নিয়ে যাওয়া হল এবং বুঝতে পারলাম তিনিই আমার রুগী ।আমি তাার শরীর পরিক্ষা করে দেখলাম তেমন কিছুই হয়নি ,হয়তো বয়সের কারণে শরীর একটু দর্বল হয়েছে তাই কিছু ভিটামিন আর প্রয়োজনীয় কিছু ঔষধ দিলাম আর বললাম কাল সকালেই আপনি ঠিক হয়ে যাবেন।সবার সাথে কথা বলে জানতে পারলাম এনারা এখান কার জমিদার ,আর এনার নাম জমিদার মিশির আলি। ঘরের মধ্য আমি সহ ছয়জন লোক তাদের মধ্যে একজনের মাধা টাক এবং তিনি আমার বিল মেটালো । বিদ্ধ লোকটি আমাকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য একজনকে বললেন ,আমি বললাম না ,সেটার দরকার নেই আমি একায় ঠিক চলে যেতে পারবো বলেই চলে এলাম ।যদিও কথাটি আমার মুুখের কথা মনের কথা নয়,কারণ আমি জানি এতো রাতে আমি রাস্তায় কিছু পাবো না ।

বাড়ি গেইট পার হয়ে দেখি একটা ভ্যান দারিয়ে আছে যেন আমার জন্যই দারিয়ে আছে ,রাত এখন তিনটা অচেনা জাইগা আর এই গ্রামটাও কেমন যেন নিস্তব্দ ,আমি ভ্যানে উঠে বললাম শদরে যাবো ,আরো বললাম একটু তারাতারি জাবেন যেন সকালের আগে বাড়ি যেতে পারি।ভ্যান চলতে থাকল ,ভ্যানটি পা চালিত হওয়ার কারণে ভ্যানটি থেকে চেইইই চেইইই শব্দ হচ্ছিলো যেন মরিচা পরা ভ্যান।আমি ভ্যানওয়ালাকে বললাম আংকেল আপনি কি এখানেই থাকেন?
তিনি বললেন :হ্যাঁ সাবেব।
আমি লোকটিকে বললাম ,আপনি এতো রাতে ভ্যান চালান কেন? দিনে চালান না ?
তিনি বললেন :না ,দিনের আলো আমার তেমন ভালো লাগে না ,রাতে যেটুকু পারি সেটুকু চালায়।
আমি বললাম ভ্যান কত বছরের পুরানো ?
সে বলল ১৮ বছর ।আমি মনে মনে ভাবলাম লোকটি হয়তোয়তো হাফ পাাগল।
আমি বললাম আপনার নাম কি ?

  • রাসু বিশ্বাস,সবাই রাসু বলে ডাকে ।

রাসুর শরীর মাঝারি মানের তবে দারি গোফে তা বোঝা যায় না ,রাসু একের পর এক ভ্যানে প্যডেল করতে করতে বলল ,আপনি সালাম ক্লিনিকের নতুন ডাক্তার ? আমি বললল হ্যাঁ ,কিন্তু আপনি জানলেন কি করে ।রাসু বলল, ক্লিনিকে নতুন কোনো ডাক্তার আসলে বড় বাবু তাকে দিয়ে চেকআপ করান তো তাই ।আমি বললাম বড় বাবু মানে জমিদার মিশির আলি ? সে বলল হ্যাঁ।
আমি বললাম, সুধু চেকআপের জন্য এতো রাতে ডাকে ?রাসু বলল হ্যাঁ, সবাইকে রাতেই ডাকে। আমি আর কিছু বললাম না তাকে ।

ভ্যানের চেইইইই চেইইইই শব্দে অনেক মাথা ধরছে ।আমি যখন দেখলাম রাসু আমাকে অন্য পথে নিয়ে যাচ্ছে তখন আমি রাসুকে বললাম এই পথে এলেন কেনো?
রাসু বলল, সাহেব এটা অনেক শর্টকাট পথ তাই এদিকে নিলাম ।আমি আর তাকে কিছু বললাম না ।
তখন আকাশ ছিলো মেঘলা ,মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল।ভ্যান চালানোর জন্য ঘাম বেয়ে পড়ছিলো রাসুর ঘারথেকে আর তখন আকশ থেকে বৃষ্টি এসে সাথে সাথেই রাসুর ঘাম মুছে দিচ্ছিল । আর রাসুর কালো চেহারা স্পষ্ট হচ্ছিলো ।

আমরা যখন গ্রামের এক বটগাছের নিচ দিয়ে যাচ্ছিলাম বিদ্যুৎচমকানোর আলোই স্পষ্ট দেখতে পেলাম ,কাফনে মোরানো একটি ঝুলন্ত লাশ।আমি রাসু ভাইকে বললাম ,একটু থামুন, দেখুন একটা লোক বটগাছে ঝুলে আছে ,একটু কাছে গিয়ে দেখা দরকার ।রাসু বলল থাক ও কিছু না । আপনি ভ্যানে বসে থাকুন ।
আমি রাসুকে বললাম ,আপনি একটু দাঁরান আমি দেখে আসি , রাসু আমাকে যেতে নিষেধ করল কিন্তু আমি শুনলাম না তার কথা আমি একটু দৌরে কাছে যেতেই বুঝতে পারলাম এই লাশটি আমার চেনা এরপর আর একটু কাছে যেতেই বুঝতে পারলাম একটি আর কেউ না যাকে আমি আমার রুগী হিসাবে দেখতে এসেছিলাম এটা উনি কিন্তু উনি এখানে কিভাবে আসলো বুঝতেই পারলাম না ,আর কাফন দেখে মনে হয় অনেক পুরানো লাশ। আমি ভয় পেয়ে আবার দৌরে রাসুর ভ্যানের কাছে চলে এলাম কিন্তু এসে আর কিছুই পেলাম না ।রাসুর ভ্যানকেও পেলাম না রাসুকেও না ।

আমি অনেকটায় ভয় পেয়ে গেছি যার কারণে আমার হাত পা কাঁপছিলো
আমার শরীরে শক্তি ছিলোনা কিন্তু পা ছেঁচরাতে ছেঁচরাতে দৌরাচ্ছি হঠাৎ একটা ঢেলের সাথে বেধে আমি মাটিতে পড়ে গেলাম ,পড়ে গিয়ে কিছুটা স্বভাবিক হলাম ,আমি তখন বুঝতে পারলাম দৌরাতে দৌরাতে আমি নদীর ধারে চলে এসেছি ।যদিও খুব ভয় করছিল তবোও কিছু করার নাই , এখানেই নৌকার জন্য অপেক্ষায় থাকা লাগবে কারন এখান থেকেই নৌকা এপারে- ওপারে যাওয়া আসা করে । নদীতে এখন কোনো নৌকা নেই কারন এখন গভির রাত ,এখন নদীতে মাঝি থাকার প্রশ্নই ওঠে না।

তবুও কোনো উপাই নেই,
এদেকি আমার এতই ভয় লাগছে যে পিছনেই তাকাতে মন চাচ্ছে না ।

আমি দেখতে পেলাম সামনে দিক থেকে একটি খালি খাটিয়া নিয়ে দুজন নৌকার উপর উঠছে ,মনে হয় ওপারে কেউ মারা গেছে আর খাটিয়া সেখানেই যাচ্ছে।

আমার সামনে এখন দুটি রাস্তা খোলা এক এখন অন্য নৌকার জন্য অপেক্ষায় থাকা যা মিত্নকে আহব্বান করার সামিল নয়ত নৌকার লোকদুটোর সাথে ওপারে যাওয়া ।

একমুহুর্তের জন্য মনে হলো কেউ একজন পিছন থেকে আমার জামা ধরে আছে ,আমি আর কিছু না ভেবে নৌকার উদ্দেশ্যে দৌর দিলাম ,আমার এমন মনে হচ্ছিলো যে নৌকাটা আমার জন্যই অপেক্ষায় আছে ,কিন্তু এখন আমার এসব কথা ভাবলে চলবে না আগে উপারে যেতে হবে ,আমি লোকদুটিকে বললাম আমাকে আমাকে একটু আমাকে একটু তারাতারি ওপারে পৌঁছে দিবেন দয়া করে , আমার মুখ দিয়ে কোনো কথায় যেন স্বাভাবিক ভাবে বের হচ্ছে না ।

আমার ভয় পাওয়া চেহারা দেখে তারা আমাকে নৌকাতে বসার জন্য বললেন ,আমি নৌকাতে উঠে বসলাম ,নৌকা চলতে থাকল ।

আকাশে অনেক মেঘ বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল এমন সময় আমি একটু ভয় কাটিয়ে লোক দুটিকে বললাম ,আপনারা কি এখান কার স্থানীয় ?
তারা বলল হ্যাঁ।

তারা আমাকে কিছুই জিগ্যেস করলো না এই যেমুন আপনার পরিচয় কি ?আর এখানে কেনো?
কিন্তু আমি ভয়পেয়ে নিজের থেকে বেশী বেশী কথা বলছি নিজের মনকে স্বভাবিক করতে।

আমি একটু চেঁচিয়ে বললাম কারণ আকাশে মেঘের কারনে নদীতে অনেক বাতাশ বইছে কথা স্বাভাবিক ভাবে বললে বোঝা যাচ্ছে না ,

“আমি জমিদার মিশির আলীর বাড়িতে গিয়েছিলাম তাকে কিছু চিকিৎসা দিতে আমি শহরের ক্লিনিকের ডাক্তার।

লোকগুলোর মুখ দেখা গেল না তবে এটা বুুঝতে পারলাম ,আমার কথা তারা কান খারা করে শুনছে এবং লোক দুটি বলে উঠল কার কাছে গিয়েছিলেন? (যেন তারা আকাশ থেকে পড়ল) ।
আমি বললাম কেন জমিদার মিশির আলি।

উনারা বললেন ,মিশির জমিদার? কিন্তু তিনি তো ১৮বছর আগে কোনো এক অস্বাভাবিক কারণে পরিবারের সবাই একসাথে মারা গেছে।

আমি একটু ভয় পেয়ে বললাম ,এটা কি করে হয় আমিতো জমিদার মিশির সাহেবকে এইমাত্র চিকিৎসা দিয়ে আসলাম ।

লোকদুটি আমার কথা শুনে দাঁত বের করে হেসে ফেলল,আর বলল সাহেব আপনি মনে হয় অনেক ভয় পাইছেন আর নয়ত আপনার মাথায় সমস্যা আছে,মরা মানুষকে কিভাবে চিকিৎসা দেন?

নৌকা এখন মাঝ নদীতে ,আমি লোকগুলোর কথা শুনে থ হয়ে বসে আছি ,আর তখনই হঠাৎ আকাশে বিদ্যুৎ চমকানি দিয়ে গেল আর পুরো নদী আলোকিত হয়ে গেল আর সেই আলোয় আমার সামনের লোকদুটির চেহারা স্পষ্ট বুঝতে পারলাম ।

তাদের চেহারা দেখার সাথে সাথে বুকের ভেতর ধপ পরে উঠল,কারণ লোকগুলো আর কেউ না স্বয়ং মিশির আলি নিজে আর তার টাকমাথা ছেলে যে ছেলে আমার চিকিৎসার ফিস দিয়ে ছিল।

আমি মনে মনে ভাবছি ,তারা যদি মারাও যায় তবে তারাই কেনো আমার সাথে কথা বলছে।

আমার বুক ধপ ধপ করছিলো ,নদীর মাঝ পথে চলে এসেছি এখন তো পালাবার পথও নাই।

চলবে…..

- Advertisement -

Related Articles

Leave a Comment:

Stay Connected

22,025FansLike
3,912FollowersFollow
18,600SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker

Refresh Page