15.7 C
New York
Saturday, September 30, 2023

ক্রাচের কর্নেল কি?

- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -

মৃত্যুর আগে অবশ্যই পড়া উচিত, এমন ৩টা ফিকশনের নাম জানতে চাইল একজন,

আমি বললাম,”ক্রাচের কর্নেল।”

- Advertisement -

সে জানতে চাইল,”এরপর?”

আমি বললাম, বাকি দুইটা নাম পরে এক সময় জেনে নিও। আজকে শুধুই ক্রাচের কর্নেল।

ছেলেটা হাসিমুখে বিদায় নিলো। দিন সাতেক পরে আমার সামনে এসে থমকে দাঁড়ালো। কাঁপা কণ্ঠে বললো,

“আপনি প্লিজ কিছু জিজ্ঞেস করিয়েন না, প্লিজ! বইটা আমি পড়েছি এবং হতবুদ্ধি হয়ে গেছি। এই দেখুন, আমার হাত কাঁপছে।”

আমি দেখলাম, সে আসলেই কাঁপছে। শান্ত স্বরে বললাম, “তুমি শুধু একটা প্রশ্নের উত্তর দাও, কর্নেল তাহের মরে গিয়েছেন, নাকি বেঁচে আছেন এখনও?”

“মৃত্যু নাই! মরবেন কেন? তাহের বেঁচে আছেন। একশোবার বেঁচে আছেন। হাজারবার বেঁচে আছেন!”

এইটুকুই শুনতে চেয়েছিলাম আমি। এর বেশিকিছু চাইলেও সে বলতে পারবেন না। দরকারও নেই।

আমতলীর চায়ের দোকানের বড় একটা অংশ আমার জন্যে সবসময়ই ফাঁকা রাখা হয়। সেইখানটাতে আমরা বসলাম। তাহের এবং ক্রাচের কর্নেল সংক্রান্ত বিষয়টাকে সম্পূর্ণ পাশ কাটিয়ে আমরা পরীমনির বিয়ে, জায়েদ খানের গিটার এবং সুলেমানের পিস্তল নিয়ে আলাপ জুড়ে দিলাম। চায়ে ও নিকোটিনে ঝড় তুলে উঙ্গাবুঙ্গা হাসিতামাশা করে সমস্ত সন্ধ্যাটা মাটি করে দিলাম।

বিদায়ের আগে ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে কাতর স্বরে বলল, “ভাই!”

আমি ওর কাঁধে হাত রেখে কর্নেল তাহেরকে উৎসর্গ করে লেখা মেজর জিয়াউদ্দীনের সেই কবিতার লাইনগুলো পাঠ করলাম,

“জন্মেছি সারা দেশটাকে কাঁপিয়ে তুলতে
কাঁপিয়েই গেলাম।
জন্মেছি তাদের বুকে পদচিহ্ন আঁকব বলে
এঁকেই গেলাম।
জন্মেছি মৃত্যুকে পরাজিত করব বলে
করেই গেলাম_

কবিতার সবটুকু শেষ না করেই ছেলেটার কাঁধে একটা ধাক্কা দিয়ে সটকানোর ভঙ্গিতে বললাম,”যাও, বাড়ি যাও।”

সে আর কথা না বাড়িয়ে বিপরীত দিকে হাঁটা দিলো। আর আমি হাঁটতে শুরু করলাম, কাজলার দিকে।

কাজলায় তখনও বৃষ্টি হচ্ছে। কর্নেলের কবরের পাশে ক্যাম্প করে পজিশন নিয়ে বসে আছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। রাইফেল আর বেয়নেট উঁচিয়ে পাহাড়া দিচ্ছে, আর ভয়ে কাঁপছে।

বৃষ্টির ঘায়ে কবর মাটি নরম হচ্ছে। কর্নেল তাহের যেকোন মুহূর্তে নরম মাটির আস্তরণ ভেদ করে হুংকার দিয়ে জেগে উঠতে পারেন।
সেই হুংকারে টলে যেতে পারে হন্তারকের মসনদ। অতএব হাতে ভারী অস্ত্র থাকা সত্ত্বেও হন্তারকের শিষ্যরা কিছুটা ভীত এবং সন্ত্রস্ত।

হঠাৎ বিকট স্বরে একটা বজ্রপাত হলো।

অস্ত্রধারী সেনাদের একজন আর্ত স্বরে দোয়া ধরলো,”লা ইলাহা ইল্লা আন্তা…”

আমার খুব হাসি পেলো। এত ভয় ওদের প্রাণে?

পায়ে পায়ে আরও খানিকটা সামনে এগিয়ে গেলাম। এখন প্রায় মধ্য রাত। অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে… বিজলির আলোতে হঠাৎ ওরা দেখতে পেলো আমায়। অস্ত্রের মুখগুলি আমার দিকে ঘুরে গেলো, কম্পিত ও ভীত কণ্ঠে প্রশ্ন এলো,”এই কে? কে এইখানে?!”

ওরা আমায় তাহের ভেবে ভুল করছে নাকি? অসম্ভব কিছু নয়!

দৃপ্ত পায়ে আরও দুই কদম এগিয়ে গেলাম। ভরাট কণ্ঠে বললাম,
“আমি… আমি ক্রাচের কর্নেল…”

আমার কথা ওদের কানে পৌঁছাবার আগেই আবারও বিকট আওয়াজে একটা বজ্রপাত হলো। বজ্র নাকি বুলেট? ভাবছিলাম, আর ভিজছিলাম… কবরের মাটি ততক্ষণে আরও বেশি নরোম হয়ে উঠছে… ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটছে আমার…
অসমাপ্ত কবিতার বাকি অংশটুকু পাঠ করতে শুরু করলাম আমি,

“জন্ম আর মৃত্যুর দুটো বিশাল পাথর
রেখে গেলাম
সেই পাথরের নিচে শোষক আর শাসকের
কবর দিলাম
পৃথিবী অবশেষে এবারের মতো
বিদায় নিলাম
জন্মেছি মৃত্যুকে পরাজিত করব বলে
করে গেলাম_

- Advertisement -

Related Articles

Leave a Comment:

Stay Connected

22,025FansLike
3,874FollowersFollow
18,600SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker

Refresh Page