Let me write a story about you Md Mukul Ali ❤️
নাম মুকুল, বাড়ি চাঁপাই নওয়াবগন্জ, এত দূর থেকে ফ্রিল্যান্সিং শিখার জন্য সিলেটে এসেছিলো । সিলেটে আসার পূর্বে সে একজন পোছ মাস্টার ছিলো, রাজনীতি আর কৌশরের উত্তপ্ত মেজাজে গ্রামে প্রচুর মারামারি করতো, একবারতো মারামারির অপরাধে দীর্ঘদিন নিজেকে লোকিয়ে রেখেছিলো যার জন্য তাকে পোছ মাস্টার বলাই যায়।
সিলেটে আসার পরে তারা ৬ জন চাপাইবাসী আমার বাসার পাশেই একটা মেস বাড়া নিলো, তখন বর্ষা কাল তার মধ্যে কোর্স শুরু হওয়ার ২ সপ্তাহর মাথায় সরকার দিয়ে দিলো লকডাউন । গাড়িঘোড়া সব যানবাহন বন্ধ, এই বুঝি লকডাউন খুলবে আর আবার ক্লাস শুরু হবে এরকম আশা নিয়ে তারা সিলেটে পড়ে আছে। আমার সাথে প্রতিদিনই দেখা হতো, আমার বাসা এমসি কলেজের খেলার মাঠের পাশে হওয়ার সুবাদে আমি তাদেরকে নিয়ে প্রতিদিন মাঠে ফুটবল খেলতে যাইতাম।
লকডাউনের বিরক্তিকর দিনে বিকেলটা বেশ সুন্দর গেলেও আমি অনুভব করতে পারতাম তারা খুব বেশি একটা ভালো নাই । সিলেটের বাহিরে থেকে যারাই আসে সবাই একটা বাজেট নিয়ে আসে। ৪ মাসের কোর্সের জায়গায় লকডাউনেই কেটে গেলো ৪ মাস ।
একদিন সন্ধায় মুকুলের ফোন দেখতে পেলাম, ফোনটা রিসিভ করে বললাম হ্যালো …
ওপাশ থেকে কাদুঁকাদুঁ কন্ঠে বলল ভাই আসলামু-আলাইকুম, এখানে একটা ঘটনা হইছে, আমার লেপটপটা বাসা থেকে চুরি হয়েগেছে! কি বলে শান্তনা দিবো বুঝে উটতে পারছিলাম না। বললাম চিন্তা করিসনা লেপটপ পাবি বাসায় আয়। তাদের সন্দেহ মেসের কেয়ারটেকার এই কাজ করেছে। কেয়ারটেকারকে ডেকে এনে জিজ্ঞেস করায় সে উল্টো ফায়ার ! অনেক খোঁজাখুঁজি করেও লেপটপ পাওয়া গেলনা।
সে ঐদিন বাবা এবং ভাইয়ের ভয়ে ব্যাপারটা বাড়িতে জানায়নি, এর ঠিক ২ দিন পড়ে মুকুল আর শান্ত টিলাগড় এক চায়ের দোকানে চা খাচ্ছে, এমন সময় এক ভদ্রলোক মুকুলকে এসে বলল ভাই আপনার মোবাইলটা দিবেন একটা ফোন করবো, মুকুল ফোন দিলো, ভদ্রলোক কাকে যেন ফোন দিলেন এবং ভদ্রভাবে কথা বলতে বলতে একটা বাইকের পিছনে বসে ফোন নিয়ে উদাও হয়ে গেলেন ।
মুকুল ব্যাপারটা খুব মনযোগ দিয়ে দেখলো আর আমাকে এসে বলল ভাই আমি চলে যাবো, সিলেটে আসার পর থেকে আমার সাথে যা হচ্ছে মনে হয় সিলেট আমাকে চাচ্ছে না।
আমি বললাম চিন্তা করিসনা সাবধানে চলাফেরা করিস, ফোন খুঁজে পাবি ।
লেপটপ খুঁজে পাবি এর মত আরেকটি মিথ্যে কথা বলে শান্তনা দিলাম।
লকডাউন থাকায় এই যাত্রায়ও সে সিলেটে থেকে গেলো। এই ব্যাপারটাও সে তার বাড়িতে বলতে পারেনি, কষ্ট করে আরেকটা ফোন এবং মোবাইল ব্যবস্হা করলো ।
কোর্স শেষ হতে হতে লকডাউন সহ মোট ৯ মাস সিলেটে থাকতে হলো এবং কোর্স শেষ হওয়া পর্যন্ত ধর্য্য-আর পরিশ্রমে তার কোনো ঘাটতি ছিলোনা ।
ব্যাচ নাম্বার ১৮ সব সময়ই স্পেশাল ছিলো, তাদেরকে নিয়ে প্রচুর নাইট ক্যাম্পিং করেছি । কোর্স শেষ হওয়ার দিন মুকুল আর শান্ত দুইটার চোখের পানি আটকানো সম্ভব ছিলোনা ।
মুকুলকে নিয়ে লিখার কারন হলো একটা গুড নিউজ আছে।আজকে সকালে একটা জাপানিজ কার/গাড়ি কোম্পানি সোস্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এবং ম্যানেজমেন্টের এর জন্য মুকুলের সাথে ১ বছরের কনট্রাক্ট করেছে এবং এই সপ্তাহের কাজ বাবদ ৪২৩ ডলার ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে পেমেন্ট করেছে ।
কোম্পানির সাথে তার ডিল প্রতি মাসে সোস্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বাবদ ১২০০ ডলার দিবে, গুগল এডস বাবদ আরো ৪০০-৫০০ ডলার দিবে এবং তার পরিচিত আরো দুইটা গাড়ির কোম্পানির কাজ এনে দিবে । কোম্পানি বলেছে তোমাকে এত কাজ দিবো যে তুমি কাজ করে শেষ করতে পারবেনা, কোম্পানি আরও বলেছে তুমার কাজের সুবিধার্তে কোম্পানীর পক্ষ থেকে আগামি মাসে ২ টা লেপটপ পাঠিয়ে দিবো।
আমি একটু ক্রেডিট নেই- বলেছিলামনা লেপটপ খুঁজে পাবি নে জাপানে তর হারিয়ে যাওয়া লেপটপ খুঁজে পাওয়া গেছে! আর ফোনও পেয়ে যাবি চিন্তা করিসনা।
আজকের মুকুল আর আগের মুকুলের মধ্যে আকাশ পাতাল ফারাক । আজকে সে আর রাজনিতির ডাকে তেমন একটা সারা দেয় না, এলাকায় মারামারি করার প্রশ্নই উঠেই না। বাবা-ভাইকে ভয়ে লেপটপ হারিয়ে যাওয়ার কথা বলতে না পারা মুকুল আজকে যখন ২টা লেপটপ জাপান থেকে আসতেছে বলবে জানিনা সেই দৃশ্যটা কতটা সুন্দর হবে। এরকম দৃশ্য দেখার জন্য আমি থাকবনা তা মেনে নিতে পারছিনা।
ভালো থাকিস মুকুল !
Collecting story-01