আমি অর্ধেকটা দম নিই বাকিটা একসাথে নিবো বলে……!
মুভি:ঊনপঞ্চাশ বাতাস
*রেড অক্টোবর ফিল্মসের ব্যানারে নির্মিত মুভিটির
প্রযোজক: আসিফ হানিফ
নির্বাহী প্রযোজক:সৈয়দা শাওন
কাহিনী, চিত্রনাট্য, সংলাপ, পরিচালনা: মাসুদ হাসান উজ্বল
সিনেমাটোগ্রাফি: হৃদয় সরকার
ব্যাপ্তি: দুই ঘন্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিট
মুক্তি:২৩ অক্টোবর ২০২০
জনরা: সাইন্স ফিকশন এবং রোমান্টিক ড্রামা।
উনপঞ্চাশ বাতাস
সিনেমাটির নামটিই একটা ঘোর রহস্য সৃষ্টি করেছিলো আমার মনে। তাছাড়া সিনেমার পোস্টার, ট্রেইলার, গান সবকিছুই ছিলো বাংলাদেশি গতানুগতিক সিনেমার থেকে একদম আলাদা। এসব বিষয়ই আমাকে সিনেমাটি দেখতে আগ্রহী করে তুলেছিলো।
কাহিনী সংক্ষেপ: উনপঞ্চাশ বাতাস একটি নির্মল, সুন্দর প্রেমের গল্পের সৃজনশীল ও শৈল্পিক উপস্থাপনা, তার সাথে রয়েছে রহস্য, ফ্যান্টাসি, অল্পবিস্তর হরর দৃশ্য।
সিনেমাটির মূল চরিত্র মিরা এবং অয়ন। মিরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের ছাত্রী। মীরার থিসিসের বক্তব্য ছিলো যদি কোনভাবে একটা ক্যাপসুলে মৃত মানুষের ডিএনএ এর ব্লু প্লেট সংরক্ষণ করা যায় তাহলে মৃত মানুষকে কোন না কোন ভাবে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। অন্যদিকে অয়ন ছিলো স্বল্প বেতনের একজন মেডিকেল সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ। সৎ, সহজ, সুন্দর কোমল মনের মানুষ অয়ন তার পেশাগত দায়িত্বের পাশাপাশি অসহায় দরিদ্র মানুষের পাশে থেকে সবসময় সাহায্য করে।
একসময় অয়ন এবং মিরার পরিচয় হয়,
এই মুভিতে আপনি পৃথিবীর প্রথম নিঃশ্বাসের বিয়ে দেখতে পাবেন…
তাদের বিয়ের পরিণয় দেখতে হলে আপনাকে সিনেমাটি শেষ পর্যন্ত দেখতে হবে।
চরিত্র: ঊনপঞ্চাশ বাতাস মুভির প্রধান চরিত্র অয়ন এবং মিরা এই দুজনের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ এবং শার্লিন ফারজানা। তারা দুজনই অসাধারণ অভিনয় করেছেন। এটাই তাদের দুজনের একসাথে প্রথম কোন সিনেমায় কাজ। সিনেমাটিতে তাদের দুজনের রসায়ন ছিলো চমৎকার। রোমান্টিক দৃশ্য গুলো ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হয়েছে।সিনেমাটিতে আরো অভিনয় করেছেন
ইলোরা গহর, মানষ বন্দ্যোপাধ্যায়, নেবিল ফেরদৌস, খাইরুল বাশার, লামিয়া আহমেদ সহ আরো অনেকে। সিনেমায় কারো অভিনয়ই অভিনয়ের মতো মনে হয়নি, মনে হয়েছে বাস্তব।
সিনেমার একটা উল্লেখযোগ্য দিক হলো,
সিনেমায় কোনকিছুকেই গতানুগতিক বাংলা সিনেমার মত অতিরঞ্জিত করে দেখানো হয়নি, সবকিছুই মনে হয়েছে স্বাভাবিক। যেমন, পোশাক, মেকআপ, সংলাপ, বডি ল্যাংগুয়েজ এসবকিছুই ছিলো স্বাভাবিক বাস্তব জীবনের মতো। সিনেমার এই স্বাভাবিক দিকটাই সিনেমাটিকে অস্বাভাবিক সৌন্দর্যমন্ডিত করে তুলেছে।
পুরো সিনেমা জুড়ে অয়ন এবং মিরার সহজ স্বাভাবিক অভিনয় ছিলো সিনেমার প্রাণ।
সিনেমাটির শক্তিশালী দিক: ঊনপঞ্চাশ বাতাস সিনেমাটির সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হলো সিনেমাটির অসাধারণ গল্প।
হৃদয় সরকারে সিনেমাটোগ্রাফি ছিলো চোখে পরার মতো, এই সিনেমায় ঢাকা শহরকে উপস্থাপন করা হয়েছে, একদম অন্যরকম ভাবে। সিনেমাটির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, লোকেশন, উপস্থাপনা সবকিছুতেই শৈল্পিক ছাপ ছিলো।
গান: সিনেমাটির আরেকটি শক্তিশালী দিক হলো সিনেমার অসাধারণ গানগুলো।
সিনেমাটিতে চারটি গান স্থান পেয়েছে
এগুলো হলো-
অর্থহীন ব্যান্ডের সুমনের গাওয়া “প্রথম”।
সোমলতা আচার্যের কন্ঠে “যেখানে”।
মাসুদ হাসান উজ্জ্বলেরর কন্ঠে ” মেঘমালা”।
এবং শওরিনের কন্ঠে ” এই শহর”।
সবগুলো গানই ছিলো মোহনীয় সুন্দর,
তবে আমার কাছে সুমনের কন্ঠে প্রথম গানটি সবচেয়ে ভালো লেগেছে।
সিনেমাটিতে সিচুয়েশন অনুযায়ী গানের ব্লেন্ডিং ছিলো একদম পারফেক্ট।
সিনেমাটির দূর্বল দিক: সিনেমাটির এডিটিং এবং ডাবিং সাইড টা একটু দুর্বল লেগেছে। তাছাড়া কাহিনী অনুযায়ী সিনেমাটির ব্যাপ্তি আরেকটু কমানো যেতো। এছাড়া আমার কাছে সবকিছু পারফেক্টই মনে হয়েছে।
ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি:ঊনপঞ্চাশ সিনেমাটি ব্যক্তিগত ভাবে আমার অসম্ভব ভালো লেগেছে। সাইন্স ফিকশন , রোমান্স, ফ্যান্টাসি, হরর এসবকিছুর একসাথে এতো সুন্দর উপস্থাপন এর আগে অন্য কোন বাংলা সিনেমাতে দেখা যায়নি।
নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল স্যারকে নিয়ে কিছু কথা: মাসুদ হাসান উজ্জ্বল একজন কবি, লেখক, নাট্য নির্মাতা ও মেঘদল ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। উনার লেখা কবিতা, উনার নির্মিত নাটক, উনার আবৃত্তি, গান সবকিছুই গতানুগতিকের থেকে অনেকটা ব্যতিক্রম। উনার সব কাজই আমার একটু বেশিই ভালো লাগে। উনার সবচেয়ে জনপ্রিয় নাটক ” যে জীবন ফড়িং এর” এখনো যারা দেখেননি দেখতে পারেন।
বিঃদ্রঃ আমরা অনেকেই বলে থাকি বাংলা সিনেমা দেখি না, দেখার মতো হয় নাকি বাংলা সিনেমা?
তাদের কাছে অনুরোধ থাকবে এই সিনেমাটি দেখার জন্য। সবশেষে আমি বলবো বাংলাদেশেও অনেক সৃজনশীল নির্মাতা রয়েছেন, এবং ইমতিয়াজ বর্ষণের মতো খুব ভালো অভিনয় শিল্পীও রয়েছেন,
কিন্তু বাংলাদেশে উনাদের দক্ষতা দেখানোর সুযোগ তেমন নেই বললেই চলে।
পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি হলে বাংলাদেশেও বিশ্বমানের সিনেমা তৈরি সম্ভব।
রিভিউ: ইয়ন্তি নিঝুম