” যখন হেরে যেতাম সেখান থেকেই প্রতিজ্ঞা করতাম আমি জিতবো। আমি বিশ্বাস করতাম আমার লড়াই কে। আমি বিশ্বাস করতাম আমার পরিশ্রম কে।” 🖤
আমি মজাদার মানুষ।
আমি হাসতে পছন্দ করি!
হাসাতেও পছন্দ করি,আমি কাউকে কষ্ট দিতে পারি না, কিন্তু আমার কষ্টেসৃষ্টে ডানি আলভেজ হওয়ার কথা কজন জানে? জানি না তা।
আমার লড়াই এর দিন টা কতো খানি কঠিন ছিল তা আমার হাসি তে কেও বুঝতে পারবে না।
আমি যখনি বল পাস করতে পারি না, আমি যখনি হেরে যাই, আমি যখনি সব থেকে একা হয়ে পরি,
দুনিয়া সমালোচনা করে।
তখন আমি পরিষ্কার আয়নার সামনে দাড়িয়ে পরি।
নিজের চোখে চোখ রাখি। লম্বা নিশ্বাস ত্যাগ করি।
আজ ও ড্রেসিং রুমের আয়নার সামনে দাড়িয়ে,
অনেক বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছি, চোখ বন্ধ করছি আর আমার সামনে ভেসে ওঠে এক কৃষক পরিবারের ছেলের মুখ। যে বাবার সাথে জমিতে যেত আর বাবাকে সাহায্যদান করতো। ছেলে টির দাদা ও ছিল, যারা দুজনে বাবা কে সাহায্যদান করতো, বাবা তাদের দুজনকে প্রতিযোগিতা তে নামিয়ে দিতেন! যে ছেলে আগে বাবার কাছে সাহায্যদান করবে, বা বেশী সাহায্যদান করবে তাকে সেই দিনের জন্যে সাইকেল দিতেন বাবা।
সাইকেল পেলেই যে শান্তি, কারন নিজের গ্রাম থেকে অন্যগ্রামে স্কুলে প্রায় ১৫ কিমি হেটে কার পরিশ্রম করতে ভালো লাগে বলুন,বাবার সাথে সাহায্যদান করাই প্রথম হয়েই সাইকেল নিয়ে ছুট স্কুলে, যাওয়ার পথে সুন্দরি স্কুলের মেয়ে দেখলে পিছনে সে বসিয়ে নিত সাইকেলে, অচেনা হলেও মেয়েটি ও চেপে যেত সাইকেলে। আরে বাবা দুরত্ব টা যে ১৫ কি:মি: স্কুলের কে সুযোগ ছাড়বে বলুন, ছেলেটি ও চালাক হেসে হেসে কাজে লাগাতো আর কি.
তার উপর বিকেলে তাড়াতাড়ি ফিরতে হত ছেলে টি কে স্কুল থেকে, অল্প দেড়ি হলেই পাড়া র ছেলে রা তাকে ফুটবল খেলা থেকে বাদ দিয়ে দেবে যে। যা সেই ছেলে টির কখনো মিস করতে চায় না। কারন ফুটবল তার প্রান-ধ্যান আর সাধনা বটে।
ফুটবল এর প্রতি এত ধ্যান দেখে কৃষক তার ছোট ছেলে কে গ্রাম ছাড়িয়ে শহরে এক ফুটবল একাডেমি তে দিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
কৃষক তার জমানো টাকা ভেঙে ছেলের জন্যে
কম দামি দু সেট জার্সি তার জন্যে কিনে আনেন। সে খুব খুশী ছিল, নতুন রঙিন জার্সির সুগন্ধ পেয়ে। বাবা ও জমানো টাকা দিয়ে ছেলে কে একাডেমি তে দিয়ে আসেন।।
ছেলেটি সেখানে ফুটবল খেলার জন্যে মুখিয়ে থাকতো কিন্তু সুযোগ পেত না। তার সাথে কেও ভালো ব্যাবহার করতোনা। আসলে নিচু জাত এর অত্যাচার বহু আগে থেকেই।
তার উপর কৃষকের ছেলে তো,
কিন্তু সে ও দমে নি খেলা দিয়ে যেন একাডেমির সবার মুখে তালা দিয়ে দিতেন। বছর শেষ এ তালিকা হত, সেখানে ছেলে টি ভালো জায়গাতে অবস্থান করতো। বাকি টিম মেট তাকে সহ্য করত না তার ভালো পারফর্ম এ, তার বাবার দেওয়া জার্সি নতুন জার্সি যা দেখে সে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিল,
সেটা ও চুরি করেছিল, হইত একাডেমির ই কেও।। এভাবে লড়াই চলতে থাকে সেই ছেলে টির। কখনো হারার কথা ভাবেন নি।
একাডেমি কোচ একদিন শার্ট কোট পরা একজনের সাথে আমাকে দেখা করিয়ে বলেন ইনি সেভিয়া ম্যানেজমেন্ট থেকে এসেছেন তোমাকে আর তোমার খেলা খুব পছন্দ হয়েছে এনাদের, তোমাকে ফুটবল খেলাতে সেভিয়া নিয়ে যেতে চায়। ছেলে টি একবারে হ্যাঁ করে দেয়।
ছেলে টি জানত না সেভিয়া কি? বা কোথায়? এটা চাঁদে না ব্রাজিলে? সে জাস্ট হ্যাঁ বলেছিল।
কারন সে খেলতে চায়। দেখাতে চায় তার বাবা কে সে পারে। নিজের স্বপ্ন কে উজাড় করতে।। নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে।
ব্যাগ গুছিয়ে ছেলে টি পাড়ি দেয় ৫ সমুদ্র, অনেক পাহাড় পর্বত ছাড়িয়ে, সে পরে জানতে পারে এটি ইউরোপ এর স্পেনের এক জায়গা। যা ল্যাটিন আমেরিকা থেকে বহু বহু বহু দূর। সেই বড় বড় নিশ্বাস নিলো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আর ব্রাজিলীয় ভাষাতে নিজেকে নিজে বলতে লাগলো, আমি পারি, আমি পারবো।
শুরু হল জীবন এর আরেক অধ্যায় তার।
না না, একদম সুখের নই।
যা ছিল নরক যন্ত্রণা সমান। সে জানে না স্প্যানিশ ভাষা, চেনে না কাউকে, না তার খাওয়ার সেখানে পাওয়া যেত। সব ছাড়িয়ে সে শুধু খেলতে চাইত।তবুও সুযোগ পেত না, বেঞ্চে বসিয়ে কোচ ছেলে টি কে আশ্বাস দিত নামাবো তোমাকে বেশী তাড়াহুড়ো কেন? নিরুপায় চুপ হয়ে থাকত।
ছেলেটি ভাবলো।
আমি গ্রামে অন্তত খেলতে পারতাম এরা আমাকে খেলাবে বলে এনে বসিয়ে রাখে আমি খেলতে পারি না। কষ্টে বুক ফাটতো, সিদ্ধান্ত নিলো চলে যাবে গ্রামে।
তখনি ছেলে টি ভাবলো বাবা কে কি মুখ দেখাবে? সে হারত না গ্রামে, এখানে কেন হারবে? সে বুক চেপে আবার আয়নার সামনে দাড়ালো আর বলতে লাগলো বড় বড় নিশ্বাস নিয়ে ব্রাজিলীয় ভাষা তে, আমি পারি আমি পারবো।
অন্ততপক্ষে আমি স্প্যানিশ শিখে যাবো, বাবা কে যাতে বলতে পারি বাবা স্প্যানিশ টা শিখেছি।
স্বপ্নের কথা বলা আর শুরু হল ট্রেন।
সেভিয়া বি দলে সেরা পারফর্ম করে ছেলে টি।
অমনি প্রথম দলে সুযোগ আর লা লিগার মত মঞ্চে নিজেকে প্রমান করার সময় এলো ছেলেটির।
বহু বছর পর ছেলে টি খুশী।
এত লড়াই পরে সে খেলতে পারবে এত বড় জায়গাতে। একের পর এক লড়াই যেন অমায়িক পারফর্ম করে সেভিয়ার নাম হয়ে যায় ছেলে টির।
ছেলে টি রক্ষণ ভাগের হলেও চাইত শুধু স্কোর করতে যা কোচের পছন্দ হত না। কোচ বলেন তাকে, দেখো! সামনে বার্সেলোনার সাথে ম্যাচ শক্তিশালী দল তুমি এমন করলে দলের ক্ষতি।
ছেলেটি জানত না সে দলে মেসি, ইনিয়েস্তা নামক ভয়ংকর প্লেয়ার খেলতো তাকে বলতেই সে ঘাব্রে যায়।। আবার আয়নার সামনে দাড়িয়ে বড় বড় নিশ্বাস আর বলে সে “আমি পারি আমি পারবো।”
এবং ম্যাচ হারলেও সে চেষ্টা করে মেসি নামক উড়তি স্টার কে থামাতে। কোচ খুশী ছিল।
এভাবেই ছেলে টি নিজেকে আরো শক্ত করে স্থাপন করার রেসে নামে , ভাষা, খাওয়ার সবই প্রায় জব্দ করে নেয়। ক্লাবে বেশ চর্চাও চলে তার নামে তখন।
একদিন সকালে ঘুম ভাঙে তার ফোনের রিংটোন তার ঘুমের ডিস্টার্ব করে।সে প্রথমে ইগ্নোরর করে আবার রিং হতেই রিসিভ করে, ফোনের ওপারে ছিল ছেলে টি র এজেন্ট, ছেলে টি তাকে জিজ্ঞাস করতেই তার এজেন্ট তাকে বলে, শুভ সকাল, তোমার জন্যে নিউজ আছে?
ছেলে টি জানতে চাই কি নিউজ?
এজেন্ট বলে।
তোমাকে বার্সেলোনা কিনতে চাই।।
ছেলে টির হাত থেকে ফোন টি পরে যায়।
চোখে জল এসেছিল। আবার আয়নার সামনে দাড়িয়ে পরে সে, বড় বড় নিশ্বাস নিতে শুরু করে, এবার বলছে, “আমি পেরেছি আমি পেরেছি।”
ছেলে টি বার্সেলোনার সাথে চুক্তি করে।
বহু কিছু জিতে নেয়। মেসি নামক স্টার কে বেশী এ্যাসিস্ট করে যেন এক জীবন্ত স্টার ছেলে টি ও হয়ে যায়।। বার্সেলোনা তখন ছেলে টি ছাড়া প্রথম একাদশ ভাবতে পারতো না।
একদিন বার্সেলোনা পুরস্কার বিতরণ মঞ্চ তৈরি করে আয়োজন করেন।
সেদিন সেই ছেলে টি তারা কৃষক বাবা কে আসতে বলেন, তার বাবা গ্রামের পরিবেশ ছেড়ে এত বড়
শহরে এই প্রথম। ছেলে টির বাবা খুব শক্ত মনের শুধু লড়েছেন। কখনো হারেন নি। ছেলে টি বছরের অন্যতম সাইড ব্যাক এর পুরস্কার বাবার হাতে তুলে দিতেই বাবার চোখে গড় গড়িয়ে নোনা জলের বন্যা। ছেলে টি দেখেছিল, তার বাবা জল টি লুকাতে চাইছিল। কিন্তু তখনি ছেলে টি হাত টি ধরে নিয়ে বুকে জরিয়ে ধরে বাবা কে।
তার বাবা বড় বড় নিশ্বাস নিয়ে বলছিল তখন।
ওয়েল ডান, তুই পারিস, তুই পেরেছিস। ভালো থাকিস। বাবা সেই একবারি এসেছিল গ্রামের বাড়ি ছেড়ে এলাহি শহরে তার মন টেকে না।
কেও একজন,
হেই হেই হেই ড্যানি। সবাই চলে গিয়েছে তুমি এখনো ওয়াস রুমের আয়নার সামনে দারিয়ে কি ভাবছ?
জ্ঞান আসতেই চোখ খুললাম,
লাল চোখ আমার জীবন এ বহু বার আয়নার সামনে আলভেজ দাড়িয়েছিল কিন্তু এভাবে কান্না করেনি।
ছেলে টি সবার প্রিয় ড্যানি আলভেজ।
যার জন্মদিন আজ। শুভ জন্মদিন প্রিয়।
আমরা জানি না একজন মানুষ কিভাবে কোথা থেকে এসে লাইফ স্ট্যান্ড করে। আমারা যেমনি আছি অনেক ভালো আছি।
আজো বার্সেলোনার খারাপ সময়ে বিনা পয়সায় খেলতে রাজি হওয়া এক অসাধারণ মানুষ।
একমাত্র খেলোয়াড় যিনি সব থেকে বেশি ট্রফির সাথে নাম লিখিয়েছেন।
এখন সে অনেক উন্নত।
আলভেজ ইতিহাসের সব চেয়ে বেশী ট্রফি জয়ী প্লেয়ার। ব্রাজিলীয় দের অন্যতম। তার গোল মনে রাখার মত। তার মন বিশ্বজয় এর মত। তার হাসি জিবনের অন্যতম সুন্দর। তাকে আমি পছন্দ করি। আমিও লড়ি তার মত। আমিও শিখি তার মত। আমিও জিতি নি তবে জিতবো একদিন তার মতই
আপনি শিখতে পারেন এ কাহিনি থেকে।
আপনি পারেন, আপনি পারবেন।
কখনো হারবেন না। কারন আপনি পারেন।।
হেই আলভেজ।। লাভ ইউ।❤️
কলমে – আবু হানিফ বিপ্লব