দূরে থেকে চির দূরে চলে যাওয়া এক মানুষ।
তাঁর জন্ম হয়েছিলো একটি সাধারণ সৈনিক পরিবারে। প্রথম সন্তান নন, তাই তাঁকে নিয়ে উচ্ছাসও খুব বেশি হয়নি। ছেলেবেলা থেকেই নিভৃতচারী, একাকী থাকতে পছন্দ করতেন। এমন একাকী সন্তানরা সাধারণত মা-বাবার সবচেয়ে প্রিয় হয়ে থাকেন, তিনিও তাই ছিলেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দুইজনেরই পরম আদরের সন্তান ছিলেন জনাব আরাফাত রহমান কোকো। নিজে রাজনীতি না করলেও প্রতিহিংসার রাজনীতির কারণে বাধ্য হয়ে তাঁকে দেশ থেকে দূরে চলে যেতে হয়েছিলো। আজ তিনি এই পৃথিবী থেকেই দূরে চলে গেলেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন।
বাংলাদেশের উন্মাতাল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে শহীদ জিয়াকে যখন বাধ্য হয়ে রাজনীতিতে আসতে হয়েছিলো, তখন তিনি খুব যত্ন করে তাঁর নিজের পরিবারকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন। এমনকি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন নেতৃত্বহীন বিএনপির হাল ধরতে রাজনীতিতে নামলেন তখনো তিনি তাঁর এই ছেলেকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন। হয়তো কোকো নিজেও রাজনীতিতে জড়াতে চাননি। তাই কখনোই তাঁকে কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে দেখা যায়নি। বিএনপির সমর্থকদের বেশিরভাগই উনাকে চেনেননা, জানেন না।
মিতবাক, সজ্জন এবং সাদাসিধা এই মানুষটার খুব ঘনিষ্টজননা জানেন তাঁর সাদাসিধে জীবন সম্পর্কে। একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হয়েও নব্বইয়ের দশকে তিনি বাকীতে মোটর সাইকেলের তেল কিনতেন। অবিশ্বাস্য মনে হতেই পারে। মাঝে মধ্যেই খেলনা আর চকলেট নিয়ে পথশিশুদের কাছে সারপ্রাইজ হিসেবে হাজির হতেন। তাদের সাথে ক্রিকেট খেলতেন।
খেলাধুলার প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিলো। ক্রীড়া অনুরাগী ছিলেন এবং খুবই ভালো ক্রীড়া সংগঠক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও সিটি ক্লাবের সাথে যুক্ত ছিলেন। সেই সময়ে যেসব খেলোয়ার এবং সংগঠক উনার সাথে কাজ করেছেন, তাঁরা জানেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নয়ন এবং খেলোয়ারদের কল্যানে তিনি নিরলস কাজ করে গেছেন, যার সুফল আজ খেলোয়াররা পাচ্ছেন। ব্যক্তিগতভাবে তিনি খেলোয়ারদের সাথে সুসম্পর্ক রাখতেন এবং তাঁদের সমস্যাগুলো মানবিকতার সাথে মোকাবেলা করার চেষ্টা করতেন। কাউকে পায়ে ধরিয়ে মাফ চাইয়ে বা বহিষ্কার করে নিজের ক্ষমতার প্রদর্শনী তিনি কখনোই করেননি।
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারী মইন-ফখরুদ্দিনরা অবৈধভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের পর যখন মাইনাস-টু ফরমুলা কার্যকর করার জন্য দুই নেত্রীকে বিদেশে পাঠাতে চাইলেন তখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বিদেশে চলে গেলেও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশ ছাঁড়তে রাজী হননি। তাঁর ওপর মানষিক চাপ প্রয়োগের কৌশল হিসেবেই তাঁর দুই সন্তানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। তারেক রহমানের মেরুদণ্ডে আঘাত করা হয় আর আরাফাত রহমান কোকোর হৃদযন্ত্রে সমস্যা দেখা দেয়। সে সময়ে সংবাদপত্রের ছবি এবং টিভির ভিডিওগুলোর কথা যাদের মনে আছে তারা হয়তো স্মরণ করতে পারবেন যে, কোকোকে সব সময়ই বুক চেপে ধরে থাকতে দেখা যেতো। সেই সময় থেকেই তিনি হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলেন।
চিকিৎসার জন্য ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই জামিনে মুক্তি পেয়ে থাইল্যান্ড গিয়েছিলেন কোকো। সেখান থেকে তিনি মালয়েশিয়ায় চলে যান। এরপর থেকে তিনি মালয়েশিয়াতেই অবস্থান করছিলেন। মালয়েশিয়াতেও তিনি খুবই সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন। একটি দুই বেডের ভাড়া বাসায় স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে থাকতেন। নিজেই প্রতিদিন দুই মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যেতেন এবং নিয়ে আসতেন। সেখানেও তিনি কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করেননি। এমনকি গত বছর জনাব তারেক রহমান যখন মালয়েশিয়ায় একটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন, সেখানেও তিনি গরহাজির থেকেছেন।
১/১১ এর পর থেকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অনেক কিছু হারিয়েছেন। নিজের জন্মদাত্রী মা’কে হারিয়েছেন, সহদোর বোন এবং ভাইকে হারিয়েছেন। ৪০ বছরের স্মৃতি বিজরিত শহীদ জিয়াউর রহমানের ক্যান্টেনমেন্টের বাড়ি থেকে এক কাপড়ে উচ্ছেদ হয়েছেন। তারপরও তিনি এই দেশের মানুষের টানে দুই সন্তান থেকে দূরে নিজের দেশের মানুষের কাছেই রয়ে গেছেন। আজ তিনি তাঁর প্রিয় সন্তানকে হারালেন। পরম করুনাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উনাকে এবং ইনার পরিবারকে এই শোক সহ্য করার শক্তি দিন। আর বিএনপি ও এই দলের নেতা-কর্মীদের এই শোককে শক্তিতে রূপান্তর করার ধৈর্য্য দিন। মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি আল্লাহপাক যেন তাকে জান্নাতবাসী করেন।
Collected by Abu Hanif Biplab
This article opened my eyes, I can feel your mood, your thoughts, it seems very wonderful. I hope to see more articles like this. thanks for sharing.